দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রতিবেদন দেয় না তদন্ত কমিটি
স্টাফ রিপোর্টার/ লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
ছয় বছর ধরে রেল দুর্ঘটনার হার ক্রমেই বাড়ছে। হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। আবার দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সেসব কমিটি যথাসময়ে প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে না। ফলে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণও জানা যাচ্ছে না, যা দুর্ঘটনা রোধে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২৯ দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে রেলওয়ে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের শুধু ঢাকা বিভাগে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৯টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার তাগাদা দিয়ে চিঠি পাঠানো হলেও সাড়া দেয়নি তারা।
২০১৬ সালের ২২ জুন রেলওয়ের ঢাকা ইয়ার্ডে দুর্ঘটনার শিকার হয় ৪৯ নং ট্রেন। একই বছরের ৩১ আগস্ট ৯৫২ নং ট্রেন, ১১ আগস্ট বি স্পেশাল ১২ ট্রেন ও ২১ অক্টোবর ৪ নং ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে। এসব দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে গঠিত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। একইভাবে ২০১৭ সালের পাঁচটি দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা পড়েনি। দুর্ঘটনাগ্রস্ত এ পাঁচ ট্রেন হচ্ছে তারাকান্দি ফার্টিলাইজার স্পেশাল, আশুগঞ্জ হপার ই নং ২২০৬, আশুগঞ্জ শাটল, ৪৯ নং ডাউন ও ৮০৯ নং ট্রেন।
২০১৮ সালে দুর্ঘটনার শিকার হয় ২৬৩ নং, ৯৭১ নং, ২৪৪ নং, ৩৭ নং, ২৬৪ নং, ৪৪ নং ও বিটি ট্রেন। এসব দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা পড়েনি। আর চলতি বছর সংঘটিত ১২টি রেল দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেননি দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত রেলওয়ের দুর্ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৮টি। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ১১৬ জন ও আহত হয় ২৯৫ জন।
২০১৪ সালে ২৪২টি দুর্ঘটনার পর ২০১৫ সালে রেলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে নেমে আসে ১৫৩-তে। এরপর ২০১৬ সালে দুর্ঘটনা আরো কমে হয় ১৩১টি। তবে ২০১৭ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা ফের বাড়তে শুরু করে। ২০১৭ সালে ১৪০টি, ২০১৮ সালে ১৫০টি ও চলতি বছরের মে পর্যন্ত ২৬টি দুর্ঘটনা ঘটে। তবে জুনে একাধিক দুর্ঘটনার কারণে চলতি বছরও দুর্ঘটনার হার আগের বছরকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেলের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাত ধরনের দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় চলাচলরত ট্রেনগুলো। ধরনগুলো হচ্ছে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনা, এড়ানো বা বিপরীতমুখী সংঘর্ষ, ট্রেন বিচ্ছিন্ন হওয়া, লেভেল ক্রসিং গেটসংক্রান্ত দুর্ঘটনা, সিগন্যাল ত্রুটিজনিত দুর্ঘটনা, লাইনচ্যুত দুর্ঘটনা ও অন্যান্য। তবে এ সময়ে সংঘটিত দুর্ঘটনার মধ্য লেভেল ক্রসিং গেটের দুর্ঘটনার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, রেলের দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়লেও দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। আর দুর্ঘটনাগুলোও নিতান্তই ছোট আকারের। দীর্ঘদিনের পুরনো সেতুর কারণে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।