অস্থির পেঁয়াজ বাজার, কোথাও বাজার শূন্য

ভূইয়া আসাদুজ্জামান / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :

বিমানে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। নতুন পেঁয়াজও কিছু কিছু বাজারে উঠছে। তাই দাম বাড়ার তেমন কোনো কারণ না থাকলেও আবার আড়াই শ টাকা ছুঁই ছুঁই পেঁয়াজের কেজি। দুই দিন আগেও ১৪০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ আজ রবিবার খুচরা বাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে ২৪০ টাকায়। র্এই মধ্যে কোথাও কোথাও বাজারে পেঁয়াজ না পাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পেঁয়াজ নিয়ে আবার এই অস্থিরতায় ক্রেতাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি দাম বাড়ার কারণ স্পষ্ট জানাতে পারেননি পাইকারি বা খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী দশ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসবে।

গত সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর অস্থির হয়ে ওঠে পেঁয়াজের বাজার। আড়ত, পাইকারি এবং খুচরা বাজারে হঠাৎ করেই বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীর এই পণ্যের দাম। প্রতিদিনে ৫০, ১০০ টাকা হারে দাম বাড়তে বাড়তে ৪৫ টাকার পেঁয়াজ পৌছে যায় প্রায় ৩০০ টাকা কেজি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারগুলোতে ২৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর মহল্লার দোকানে পেঁয়াজের দাম গিয়ে দাঁড়ায় ৩০০ টাকায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। পাকিস্তান প্রথম পেঁয়াজের চালান দেশে পৌঁছায়। এরপর আরও একাধিক দেশ থেকে পেঁয়াজের চালান এসেছে। সরকারের দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল পেঁয়াজ আমদানি করা হলে দেশের বাজারের দাম কমে আসবে।

আমদানি করা পেঁয়াজ সরকারি সংস্থা টিসিবির ন্যায্যমূল্য কর্মসূচি ট্রাক সেলের মাধ্যমে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু হয়। এর কিছুটা প্রভাব পড়েছিল পাইকারি ও খুচরা বাজারে। গত মঙ্গলবার বেশ কিছু পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারগুলোতে ব্যবসায়ীরা ক্রেতা সংকটে ভুগছেন। দেশের বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে ক্রেতা পেঁয়াজ কেনা থেকে বিরত রয়েছেন বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিলেন। এ সময় পাইকারি ২৪০ টাকার পেঁয়াজ নেমে আসে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়।

কিন্তু দুদিন যেতে না যেতেই বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচাবাজার, শিয়া মসজিদ বাজারসহ বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়।

মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচা বাজারের ক্রেতা পারভিন বেগম বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম একটু কমতে শুরু করেছিল, ভাবলাম আরও একটু কমুক, তখন কিনব। দুই দিনের মধ্যে আবার দাম বেড়ে গেল। সরকার কী বলে, আর বাস্তবে কী হয়! এগুলোর দিকে ভালোভাবে নজর দিতে হবে।‘

মুদি ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমরা তো পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ এনে দোকানে বিক্রি করি। আজ বাজারে গিয়ে ঘুরে আসতে হয়েছে। দাম বেশি। তাই পেঁয়াজ আনিনি। দাম কমলে আনব।‘

সোহরাব হোসেনের মতো আরও অনেক খুচরা ব্যবসায়ী তাদের দোকানের জন্য পেঁয়াজ নেননি। এর প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন এলাকার কাঁচাবাজার ও মুদি দোকানে। অনেক এলাকার দোকানে পেঁয়াজ নেই। খিলক্ষেত থেকে একজন গৃহিণী ঢাকা টাইমসে ফোনে করে জানান, তিনি রবিবার বাজারের কোনো দোকানে পেঁয়াজ পাননি। কোথায় পেঁয়াজ পাওয়া যাবে এ ব্যাপারে তাকে কোনো সহযোগিতা করা যাবে কি না জানতে চান।

রাজধানী ঢাকায় কুড়িল, বাসাবোসহ বিভিন্ন স্থানে খবর নিয়ে জানা যায়, ওই সব এলাকার অনেক দোকানে পেঁয়াজ নেই। কেউ কেউ আগে থেকে পেঁয়াজ রাখছেন না দাম নিয়ে অস্থিরতার কারণে। এ ছাড়া পাইকারি বাজারে সকাল-বিকাল দামের ওঠানামার কারণে দোকদাররা তাদের ক্রেতাদের আস্থা হারাতে চান না বলে পেঁয়াজ রাখেন না।

রাজধানীর বড় কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে আজ দেশি পেঁয়াজ খুচরা প্রতি কেজি বিক্রি হয় ২৪০ টাকায়। কারওয়ান বাজার পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, চীনের পেঁয়াজ ১১০ টাকা, মিয়ানমারের ১৮২ থেকে ১৮৮ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১৭৫ থেকে ১৭৭ টাকা ও বড় আকারের পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১৭০ টাকা কেজি।

পাইকারি বিক্রেতারা জানান, দুই দিন আগেও দেশি পেঁয়াজের দাম কমে নেমেছিল ১৬০ টাকায়। কিন্তু এখন সেই পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। বাজারে দেশে পেঁয়াজের সংকট এবং সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

এদিকে শনিবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার ‘সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।‘

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *