ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন না প্রশাসক

হাইকোর্ট রিপোর্টার / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :

২০১৩ সালের ওয়াকফ হস্তান্তর ও উন্নয়ন আইনের তিনটি ধারা ও একটি দফা বাতিল ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। ফলে এখন থেকে ওয়াকফ প্রশাসক সংশ্লিষ্ট কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন না।

এ-সংক্রান্ত একটি রিটের শুনানি নিয়ে এইঘোষণা দেন বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ফারুকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ।

রায়ে ওয়াকফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) আইনের ৩, ৪(চ), ৮ ও ১২ ধারা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়।

এর আগে ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম নুরুল ইসলাম ওই আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি করেছিলেন।

আইনের ৩ ধারায় আইনের প্রাধান্য, ৪ (চ) ধারায় হস্তান্তর পদ্ধতি-অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তরের মাধ্যমে, ৮ ধারায় হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে বিশেষ কমিটি এবং ১২ ধারায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তরের বিধান রয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রিট আবেদনকারী এ বি এম নুরুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী মো. মহিউদ্দিন (মহিম)। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

রায়ের পর আইনজীবী এ বি এম নুরুল ইসলাম বলেন, রাসুল (সা.)-এর জীবিতকালে ওয়াকফ-এর বিধান চালু হয়। এটা কুরআন নির্দেশিত পন্থা যে যার অঢেল সম্পত্তি রয়েছে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ওয়াকফে তার সম্পত্তির কিছু অংশ দান করে থাকেন। ওয়াকফের সম্পত্তির আয় থেকে তিনটি উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে- ধর্মীয়, দাতব্য ও মানবহিতৈষী কাজে। অন্য কোনো কাজে এ সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য নয়।

নুরুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালের সরকার বিশেষ আইন ওয়াকফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) প্রণয়ন করে। এ আইনের ৩ ধারায় আইনটিকে সব আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়। পাশাপাশি ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান রাখা হয়। আইনে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রশাসক ওয়াকফ সম্পত্তি ঢাকায় বসে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে হস্তান্তর বা অংশীদারির দেখভাল করছেন। ওই কমিটিতে মোতায়াল্লি, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বা প্রশাসনকে সম্পৃক্ত নন। ফলে গত পাঁচ বছরে উন্নয়নের নামে অনেক ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর হয়ে গেছে।

হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করে আইনের তিনটি ধারা ও একটি উপধারা বাতিল ঘোষণা করেন। ফলে ওয়াকফ প্রশাসকের সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষমতা খর্ব হলো। তিনি আর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন না।

২০১৩ সালে ওয়াকফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) আইনের বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিটের পর ওই বছরের ২৯ এপ্রিল হাইকোর্ট আইনটি কেন অসাংবিধানিক এবং ওয়াকফ সংক্রান্ত অন্যান্য আইনের পরিপন্থী হবে না তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। কয়েক কার্যদিবস শুনানি শেষে রুল যথাযথ ঘোষণা করে আজ রায় দিল হাইকোর্ট।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *