স্কিলস এবং ফিউচার অব ওয়ার্ক বিষয়ক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত

শাহ্ সাকিব / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের উইন্ডি টাউন হলে ‘স্কিলস এবং ফিউচার অব ওয়ার্ক’ বিষয়ক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনিসেফ, একশনএইড বাংলাদেশ এবং এটুআই এর যৌথ আয়োজনে ৫ ডিসেম্বর ২০১৯ অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) এবং জেনারেশন আনলিমিটেড (জেন ইউ) ইন বাংলাদেশ’র সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মোঃ আব্দুল মান্নান। সমাপনী অধিবেশনে প্যানেল আলোচনা সঞ্চালনা করেন এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, “তরুণ প্রজন্মের সফলতা আনতে হলে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।” এক্ষেত্রে মোবাইল ব্যবহারে দক্ষতা অর্জনের উপর জোর দেন তিনি। তিনি বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশের দার্শনিক চিন্তাধারা এবং সে অনুযায়ী কর্মসম্পাদনে সব ধরনের মানুষের অন্তর্ভুক্তি থাকায় ডিজিটাল বাংলাদেশ দ্রুত বাস্তবায়নের রূপ দেখতে পেরেছে। এ প্রেক্ষাপটে মোবাইলে তথ্য সেবা দেয়ার মাধ্যমেই আজকের এই ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।” “ডিজিটাল প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে দিন, তারই বদৌলতে আজকের টেলিমেডিসিন” ঠিক এমন করেই দেশের প্রতিটি খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া লেগেছে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো বলেন, “যাদের জন্য করছি আর যাদেরকে নিয়ে করছি একসাথে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে পারলেই আমাদের সফলতা নিশ্চিত। এক্ষেত্রে সকল ইন্ড্রাস্ট্রিকে গবেষণায় আরো মনোযোগী হতে হবে।”

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, “কোন পেশাকেই ছোট করে দেখা যাবে না। সমাজের সকল পেশাই সম্মানজনক। সকল খাতে সময়োপযোগী শিক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের সকল ধরনের সহযোগীতার পাশাপাশি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।” প্রতিনিয়ত শ্রম বাজারের পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানে প্রস্তুত বলে তিনি জানান।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক বলেন, “আইসিটি বিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ উদ্যোক্তা তৈরি করা সম্ভব।” শিক্ষায় ই-লার্নিং পদ্ধতির উপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ঐতিহ্যগত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বেরিয়ে এসে স্কুল পরবর্তী সময়ে ই-লার্নিং প্রোগ্রাম চালু করা উচিত। এক্ষেত্রে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কারিকুলামে বিষয়ভিত্তিক ও সময়োপযোগী কারিকুলাম আপডেট করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত।

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ-এর নির্দেশনা অনুযায়ী আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি, বিগ ডাটা, রোবটিক্স এবং সাইবার সিকিউরিটি’র মতো ইমার্জিং টেকনোলজির উপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি মাইক্রোচিপ বা মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইনিং নিয়ে কাজ করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “একটি পিরামিড সিস্টেম গড়ে তোলা হচ্ছে যেখানে সবচেয়ে উপরের স্তরে থাকবে উদ্ভাবক, ২য় স্তরে উদ্যোক্তা এবং ৩য় স্তরে ব্যবস্থাপক ও নিয়োগকর্তা কিংবা ইন্ডাস্ট্রি। উদ্ভাবক গড়ে তোলার পাশাপাশি ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে আইডিয়া প্রজেক্ট এবং এটুআই-এর ইনোভেশন ল্যাব (আইল্যাব) কাজ করে যাচ্ছে।”

তথ্য প্রযুক্তি ও ইনোভেশনের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এটুআই এবং আইসিটি ডিভিশনের উদ্যোগে ‘সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলুশন’ স্থাপন করে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে একসাথে কাজ করার আহবান জানান।

জেনারেশন আনলিমিটেড (জেন ইউ) ইন বাংলাদেশ এর সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, “২০২১ সালের মধ্যে সকল শিক্ষার্থীর জন্য ভোকেশনাল কোর্স নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে উদ্যোক্তা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

দক্ষ শ্রমিকদের প্রবাসে পাঠাতে পারলে দেশের রেমিটেন্স অনেকগুনে বেড়ে যাবে, তাতে দেশের আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হবে।”

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ইন্ডাস্ট্রি এবং স্কিলস ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির মধ্যে দূরত্ব কমাতে পারলে বেকার যুবকদের ডিসেন্ট অ্যাপ্লয়মেন্ট সম্ভব। এক্ষেত্রে একটা বিশাল সংখ্যক যুব সমাজকে ইন্ডাস্ট্রি ভিত্তিক ট্রেনিং এবং শিক্ষানবিশির আওতায় আনতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের আরো দক্ষ করে বিদেশের মাটিতে পাঠাতে পারলে তারা আরো বেশি পারিশ্রমিক পাবে এবং আমাদের রেমিটেন্স বাড়বে।

সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) মোঃ ফারুক হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভিবাসী কল্যাণ অনুবিভাগ) ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সফিকুল ইসলাম, ইউনিসেফ বাংলাদেশের জেন্ডার স্পেশালিস্ট নওরিন খান, একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, আইএলও-এর চীফ টেকনিক্যাল অফিসার (স্কিলস ২১ প্রজেক্ট) কিশোর কুমার সিং, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, ইকরা বাংলাদেশের (কওমি শিক্ষা বোর্ড) চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ।

এছাড়া ইউনিসেফ, একশনএইড বাংলাদেশ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ’র সহায়তায় পরিচালিত এটুআই এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি, দাতা সংস্থা ও এনজিও কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *