নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে চলমান কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ২০১৯ সালের মে মাসে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ২০ পদের বিপরীতে ৩৫ জন নিয়োগ দেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৭ মাস পর লিখিত পরীক্ষা নেয়ার তারিখ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ২৭ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে চিঠি প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, যেখানে স্থগিত থাকে সেকশন অফিসার পদে দুইজনকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি।

কিন্তু এই পদে আবেদনকারীদের মধ্যে প্রভাবশালী কয়েকজন রয়েছেন। যাদের মধ্যে সাবেক ছাত্র নেতা থেকে শুরু করে শিক্ষক নেতা ও রাজনৈতিক নেতার প্রার্থীও রয়েছেন।

পদে নিয়োগ সংখ্যা দুইজন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান। তাই এই পদের নিয়োগ স্থগিত রেখেই অন্য পদের নিয়োগ পরীক্ষা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত ৩১ডিসেম্বর দুপুরে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার ২৪ ঘন্টার কম সময়ের মধ্যেই মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্যে ১ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অভিযোগ রয়েছে, পরীক্ষা নেয়া পদগুলোর মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ), সহকারী প্রকৌশলী (ইন্সট্রুমেন্ট) এবং অডিটর পদে প্রত্যাশিত প্রার্থী উপস্থিত না থাকায় এই পদগুলোতে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের অনুর্ত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক এবং কর্মকর্তা জানান, ‘এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়া সব থেকে বিতর্কিত। একটি নিয়োগও স্বচ্ছ হয়নি।’

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের পরিচিত এক ব্যক্তিকে অডিট অফিসার পদে নিয়োগ দিতে ব্যাপক অর্থের লেনদেন হয়েছে। এছাড়া কম্পিউটার অপারেটর পদে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরও ব্যবহারিক পরীক্ষার দিন নতুন করে রোল ২৭ কে যুক্ত করা হয়। যা উপাচার্যের হস্তক্ষেপে করা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে একটি বিশ্বস্ত সূত্র।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ফলাফল প্রকাশে একটু ভুল হয়েছে তাই সংশোধন করা হয়েছে। ভুল হলে প্রশাসন যেকোনো মুহূর্তে সংশোধন করতে পারে। আমরা সেটিই করেছি।’

অন্যদিকে অডিট অফিসার পদে ৫০ রোল ধারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের ভাই হিসেবে পরিচিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় সেই শিক্ষক (সোহেল রানা) থাকবে না বললেও তিনি সেই মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

শিক্ষক সোহেল রানা বলেন, ‘৫০ রোল ধারী আমার কোনো ভাই নয়। আর আমি মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে থাকবো না।

পরে ওই রোল ধারী শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘উনি আজকের ( ১জানুয়ারি) পরীক্ষা সম্পর্কে জানেনই না। আর সোহেল রানা স্যার উনার পরিচিত নয়।’

কিন্তু ফোনে কথা বলার দুই ঘন্টা পর উনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে দেখা যায়। আর শিক্ষক সোহেল রানাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং তার অভিভাবক হিসেবে পোষ্ট করতেও দেখা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা বলেন, ‘এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়ো এক কেন্দ্রিক হয়েছে। উপাচার্য স্যার তো সকল জায়গায় বলেন কেউ আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতে পারবে না। তার এই নিয়োগ পরীক্ষা ছিলো কেবল লোক দেখানো। আগে থেকেই যাদের নেয়া হবে তা নির্ধারিত ছিল। দুদক বা ইউজিসি যদি একটা অডিট করে বা ভালোভাবে তদন্ত করে তবে সব প্রকাশ পাবে। এই নিয়োগে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা, শিক্ষক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভাগ করে দেয়া হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, ‘এখনো সিন্ডিকেট হয়নি আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি রোলসহ বলে দিবো ২০ পদে কারা বসছে।’

ধারণা করা হচ্ছে ‘কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে।’

নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘প্রশাসনের সকল সিদ্ধান্ত উপাচার্য স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী হচ্ছে। আর যারা লিখিত পরীক্ষায় চান্স পেয়েছে বেশিরভাগই ময়মনসিংহ অঞ্চলের। তাছাড়া আগে থেকেই ফোনে জানানো হয়েছে তাদের। যা হচ্ছে নিয়মের মধ্যদিয়েই হচ্ছে।’

নিয়োগ দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি অবগত নই। উপাচার্য স্যার সকল তথ্য দিতে পারবেন। আমার দেখা অনুযায়ী নিয়মমাফিক সকল কিছুই হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, লিখিত পরীক্ষায় তিনটি পদের ফলাফলে কেউ উর্ত্তীন হয়নি লিখা থাকলেও বিজ্ঞপ্তির কোথাও উর্ত্তীর্ণ হতে কত নম্বর পেতে হবে তা লেখা ছিল না।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *