ওড়না-টুপিতে ‘না’, যেসব যুক্তি দেখাচ্ছেন আইডিয়াল অধ্যক্ষ
স্টাফ রিপোর্টার / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
ভর্তিতে অনিয়ম, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিসহ নানা কারণে আলোচনায় থাকা মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজকে নিয়ে এবার নতুন ইস্যুতে সমালোচনা হচ্ছে। স্কুল পর্যায়ের ছাত্র ও ছাত্রীদের ড্রেস কোড পরিবর্তনের প্রতিবাদে এবার আন্দোলন করছেন প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকরা। হঠাৎ করে চলতি বছরের শুরু থেকে ছাত্রীদের ওড়না এবং টুপি পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছে শিক্ষার্থীরাও।
তবে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম ঢাকা টাইমসকে বলছেন, ‘শিক্ষার্থীদের পোশাকের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সবাই ওড়না পরেও না। তাই ওড়নার পরিবর্তে হিজাব রাখা হয়েছে।’ এ ছাড়া নতুন সিদ্ধান্তের বিষয়ে বেশ কিছু যুক্তিও দিয়েছেন আইডিয়াল প্রধান।
গত আগস্টে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে নতুন এই বিধান কার্যকর করা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন অভিভাবকরা। এর আগে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে স্কার্ফের পরিবর্তে ওড়না বাধ্যতামূলক ছিল। নতুন ড্রেস কোডে হিজাবকেও ঐচ্ছিক করা হয়েছে ছাত্রীদের জন্য।
অন্যদিকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীদের জন্য আগে ক্রস ওড়না বাধ্যতামূলক থাকলেও নতুন সিদ্ধান্তে ছয় ইঞ্চির ক্রস বেল্ট ওড়না ও মাথায় হিজাব ঐচ্ছিক করা হয়েছে। অপরদিকে ছাত্রদের জন্য টুপিকে ঐচ্ছিক করে সাদা শার্ট ও নেভি ব্লু প্যান্ট এবং সাদা জুতা ও মোজা পরার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মেয়েদের জন্য ওড়না এবং ছেলেদের জন্য টুপি পড়ার বিধান বাতিল করে দেয়ায় এই ক্ষোভের তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। ইতিমধ্যে তারা কর্তৃপক্ষকে আলটিমেটামও দিয়েছেন। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এর সমাধান না করলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
নতুন এই সিদ্ধান্ত আসার পর থেকে এর প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করছেন মতিঝিল ও বনশ্রী শাখার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিষ্ঠানটির বনশ্রী ক্যাম্পাসের সামনে কয়েকশ অভিভাবকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির মতিঝিল ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ হয়েছে।
তোফাজ্জল হোসেন নামের এক অভিভাবক জানান, ওড়না, স্কার্ফ ও ছেলেদের টুপি নিয়ে যেহেতু অভিভাবকদের কোনো অভিযোগ নেই, সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কেন এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিল। এটা যদি করতেই হতো তাহলে অভিভাবকদের সঙ্গে বসতে পারত। পরামর্শ নিতে পারত, কিন্তু কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠান এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবিলম্বে ওড়না, স্কার্ফ ও ছেলেদের টুপি ব্যবহারের যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা তুলে নেয়া হোক।
অন্য অভিভাবকরা বলছেন, আগে মেয়েদের ড্রেসকোডে মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও নতুন প্রণীত ড্রেসকোডে সেখানে স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর ছেলেদের মাথায় টুপি ব্যবহারকেও অঘোষিতভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, শিক্ষকদের মধ্যেও আগে যারা পাঞ্জাবি পড়ে স্কুলে আসতেন তাদেরকে এখন পাঞ্জাবি পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কেউ পাঞ্জাবি পরলেও পাঞ্জাবির উপরে আলাদাভাবে কটি পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ছাত্রীদের ড্রেসের মধ্যে সৌন্দর্য বাড়াতে বাড়তি ওড়না নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গভর্নিং বডি। প্রতিষ্ঠানে মুসলিম ছাত্রীসহ হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্মের ছাত্রীরা পড়ে। তাছাড়া সবাই ওড়না পরে না। তাই ওড়নার পরিবর্তে হিজাব রাখা হয়েছে। কেউ চাইলে তা পরবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হিজাবেও শরীর ঢাকা যায়, এ জন্য ওড়না জরুরি না। তারপরও কেউ চাইলে পরবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ জামানের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। সরকারের এই অতিরিক্ত সচিব বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
নতুন ড্রেস কোডের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহান আরা বলেন, ‘ড্রেস কোড পরিবর্তন হয়নি। আগে মেয়েরা আলগা ওড়না পরলেও সেটা গলায় ঝুঁলিয়ে রাখত। তারা ঠিকমতো ধোয় না, ইস্ত্রি করে না। আর মাথায়ও পরে না। যে কারণে সবাইকে যাতে একটু ফিটফাট দেখা যায় সেজন্য এমন সিদ্ধান্ত। আর হিজাব পরলে তো তাদের শরীর ঢেকে যায়। সমস্যা কোথায়?’
ওড়না কেউ পরতে চাইলে পরতে পারবে- তিনি এমন দাবি করলেও অভিভাবকরা বলছেন, নতুন ড্রেস কোডের বাইরে ওড়না পরে ক্লাসে গেলে অনেককে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে অধ্যক্ষ বলছেন, এটা মিথ্যা কথা। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা অপপ্রচার।
ছেলেদের টুপি ঐচ্ছিক করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের বাইরেও প্রতিষ্ঠানে অন্য ধর্মালম্বী ছাত্রছাত্রীরা পড়ালেখা করে। তারা তো টুপি পরে না। তাই একসঙ্গে দেখতেও অন্যরকম লাগে। এ কারণে এমন সিদ্ধান্ত। তবে কেউ পরতে চাইলে সে পরতে পারবে, বাধা নেই।
এ ঘটনার প্রতিবাদ নিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘যারা এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তারাও তো জানেন প্রতিবাদ হচ্ছে। তারপরও আমাদের আগামী সপ্তাহে মিটিং আছে, সেখানে এ নিয়ে কথা বলব।’