দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ঢাবি শিক্ষকের শাস্তি মওকুফের চেষ্টা অব্যাহত
ঢাবি প্রতিনিধি / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান নাসরীন ওয়াদুদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছাড়া বিদেশ গমন ও দুর্নীতির দায়ে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি পান। সেইসঙ্গে অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদাবনতির শাস্তি পান।
শাস্তির দুই মাস পার হতে না হতে এখন আবার শাস্তি মওকুফের তদবির শুরু হয়েছে। শাস্তি মওকুফের জন্য তদবির করতে বর্তমান চেয়ারম্যান পত্রও প্রেরণ করেছেন উপাচার্য বরাবর। বিভাগের সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটির মিটিংয়ে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়।
উপাচার্য বরাবর লিখিত পত্রে বলা হয়, ‘ড. নাসরিন ওয়াদুদ পদাবনতির কারণে শারিরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মানবিক কারণে তাকে অধ্যাপক পদে পুনর্বহালের জন্য সুপারিশ করা হলো।’
আবেদনের বিষয়ে বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সব ধরণের কার্যক্রম করবে। বিভাগ ও প্রশাসন যদি মনে করে তাকে পুনর্বহাল করা প্রয়োজন, তবে সেটা বিবেচনায় নেওয়া হবে। এখানে অপরাধ করে কেউ পার পেয়ে যাবে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন সূত্রে জানা যায়, এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ২লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কমিটির জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের প্রজেক্টর কেনা হয় ৯০ হাজার টাকা দিয়ে। ৩৭ হাজার টাকার এসি কেনা হয় ৭৪ হাজার টাকা দিয়ে। অন্যদিকে আড়াই হাজার প্রিন্টার দেখানো হয় ১০ হাজার টাকা দামে। এ থেকে ৯ হাজার টাকার ৪টি প্রিন্টারের মূল্য দেখানো হয় ৪০ হাজার টাকা। ৮১ হাজার টাকার পণ্য দেখানো হয় ২ লাখ ৪ হাজার টাকা। দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকায় চাকরিচ্যুত করা হয় বিভাগের স্টোর অফিসার মো. মতিয়ার রহমান।
বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, পদাবনতির পর থেকে নিয়মিত বিভাগে আসেন না তিনি। নিজের দায়িত্বে থাকা কোর্সগুলিও সম্পন্ন করেন জুনিয়র শিক্ষক দিয়ে। একইসঙ্গে নিজের এই দুর্নীতির জন্য কোনরূপ ক্ষমা প্রার্থনা, অনুশোচনা কিংবা স্বীকারোক্তিও দেননি তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ভবন সূত্রে জানা যায়, বিভাগীয় সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটির সিদ্ধান্তে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল করিম। নোট অব ডিসেন্টে তিনি বলেন, ‘ড. নাসরিন ওয়াদুদ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়েছেন। শাস্তি প্রদানের পর এই অধ্যাপক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ‘পাগল ও বানরের’ সাথে তুলনা করে স্ট্যাটাস লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক মীর ফখরুজ্জামানের পক্ষাবলম্বন করে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি লিখেন। শাস্তির পর তিনি বিভাগীয় অফিসে তেমন যান না, সিএন্ডডি ও একাডেমিক কমিটির সভায় থাকেন না এবং তার ওপর অর্পিত শিক্ষাকার্যক্রম ও পরীক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্বও পালন করেন না।’
দুর্নীতির বিষয়ে ড. নাসরিন ওয়াদুদ বলেন, ‘ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কোটেশন দেয়, সে অনুযায়ী কেনা হয়েছে। এখানে আমার কোনো হাত নেই। এটা তো চেয়ারম্যান কিনে না। এর দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের।’ তিনি বলেন, ‘নাসরিন ওয়াদুদের রক্তে দুর্নীতি নেই।’
বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম বলেন, ‘এটা আমাদের একান্ত গোপনীয় বিষয়। এ নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না।’