বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১০ ভবনে ত্রুটি পেয়েছে ফায়ার সার্ভিসনিহাল হাসনাইন
স্টাফ রিপোর্টার / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১০ ভবনে নানা মাত্রার ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে পাঁচটি ভবনে নির্মাণজনিত বিচ্যুতির কারণে যেকোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো বেশ দুঃসাধ্য হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। অন্য পাঁচ ভবনে নানা মাত্রার ত্রুটি চিহ্নিত হলেও সেগুলো মারাত্মক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম অথবা তাত্ক্ষণিকভাবে মেরামতযোগ্য।
সম্প্রতি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সরেজমিনে পরীক্ষা চালানো হয়। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে নির্মাণ বিচ্যুতি পাওয়া গেছে সচিবালয়ের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৭, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর ভবন এবং পরিবহন পুল ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ভবনে।
নির্মাণজনিত বিচ্যুতির কারণে সচিবালয়ের ৪, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর এবং পরিবহন পুল ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ভবনে জরুরি মুহূর্তে উদ্ধার কার্যক্রমে বেগ পেতে হবে তুলনামূলক বেশি। এর মধ্যে নয় তলাবিশিষ্ট ৪ নম্বর ভবনে রয়েছে কৃষি, পার্বত্য চট্টগ্রাম, খাদ্য ও তথ্য, আইন, ভূমি ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের দপ্তর।
ফায়ার সার্ভিসের পর্যবেক্ষণ বলছে, ভবনটিতে জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, ফায়ার লিফট ও আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভের ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো ফায়ার পাম্প সেট। ফায়ার ডিপার্টমেন্ট কানেকশন, রাইজার ও হাইড্র্যান্টের মতো জরুরি সরঞ্জামাদির ব্যবস্থাও রাখা হয়নি ভবনটিতে। বহুতল ভবনের সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে প্রত্যেক ফ্লোরে সেফটি লবি থাকার কথা থাকলেও তা এখানে রাখা হয়নি। পাশাপাশি ভবনটির তিনটি সাধারণ সিঁড়ির মধ্যে ছাদে খোলা রয়েছে শুধু একটি। কক্ষগুলোর দরজার সুইংও ত্রুটিপূর্ণ। নেই স্মোক ডিটেকশন ও অ্যালার্ম সিস্টেম। ছাদে লাইটিং প্রটেকশন সিস্টেমও নেই।
অর্থ, শ্রম ও কর্মসংস্থান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দপ্তর রয়েছে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে। এ ভবনটিও নয়তলা বিশিষ্ট। বহুতল এ ভবনে আলাদা আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার নেই। নেই জরুরি নির্গমন সিঁড়ি ও ফায়ার লিফটও। এ ভবনের কোনো ফ্লোরেই সেফটি লবি নেই। তিনটি সাধারণ সিঁড়ির মধ্যে ছাদে খোলা রয়েছে শুধু একটি। দরজার সুইং ত্রুটিপূর্ণ। স্মোক ডিটেকশন ও অ্যালার্ম সিস্টেম নেই।
সচিবালয়ের চারতলা বিশিষ্ট ৮ নম্বর ভবনটিতে ৫০০ জন লোকের জন্য সিঁড়ি রয়েছে মোটে একটি। এখানে সিঁড়ির প্রশস্ততা মাত্র সাড়ে ৩ ফুট। ফলে জরুরি প্রয়োজনের সময় উদ্ধার কার্যক্রম চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস। উপরন্তু সিঁড়িটি ছাদে খোলা নেই। ভবনটিতে কোনো জরুরি নির্গমন পথও নেই। দরজার সুইং ত্রুটিপূর্ণ। এছাড়া ভবনটির লাইটিং প্রটেকশন সিস্টেমও নেই। এ ভবনে রয়েছে ধর্ম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দপ্তর।
৯ নম্বর ভবনে আলাদা আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার থাকলেও নেই কোনো ফায়ার পাম্প সেট। স্থাপন করা হয়নি হাইড্র্যান্ট সিস্টেম বা রাইজারও। জরুরি নির্গমন ব্যবস্থাও নেই। পাশাপাশি মূল সিঁড়িটিও ছাদে খোলা হয়নি। নেই স্মোক ডিটেকশন সিস্টেমও।
ফায়ার সার্ভিসের পর্যবেক্ষণে সবচেয়ে বেশি বিচ্যুতি পাওয়া গেছে পরিবহন পুল ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ভবনটিতে। ভবনটির একদিকে ১২ তলা ও অন্যদিকে পাঁচতলা। এখানে আলাদা কোনো আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার নেই। ১২ তলার অংশে নেই কোনো জরুরি নির্গমন সিঁড়ি বা ফায়ার লিফট। ওঠানামার জন্য সিঁড়ি রয়েছে মাত্র একটি। পাঁচতলা ভবনটিতে সিঁড়ি রয়েছে দুটি। এর মধ্যে ছাদে খোলা হয়েছে একটি। ভবন দুটির কোনোটিতেই স্মোক ডিটেকশন সিস্টেম নেই। ছাদে লাইটিং প্রটেকশন সিস্টেম নেই। পার্কিংয়েও পাওয়া যায়নি স্প্রিংকলার সিস্টেম।
এছাড়া সচিবালয়ের ১, ২, ৩, ৫ ও ১০ নম্বর ভবনেও নানা মাত্রার ত্রুটি পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে ভবনগুলো বহুতল না হওয়ায় অথবা কাঠামো ও জনসমাগম বিচারে ততটা আশঙ্কাজনক না হওয়ায় এসব ত্রুটি মারাত্মক হয়ে দেখা দেয়ার সম্ভাবনা কম।
এ ১০ ভবনের বাইরেও গণপূর্ত ভবনের পাঁচটি টিনশেড ঝুঁকিপূর্ণ বলে ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এগুলোর অ্যালার্মিং ও স্মোক ডিটেকশন সিস্টেম নেই। নেই পর্যাপ্ত এক্সটিংগুইশারও। ভূগর্ভস্থ জলাধার সংযোগও নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি ভবনগুলোর তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন হায়দার বণিক বার্তাকে বলেন, সচিবালয়ের ভবনগুলোর অগ্নিসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলার সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল। সেখানে ভবনগুলোর কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয় উঠে এসেছিল, যেগুলো প্রতিবেদন আকারে আমাদের কাছে পাঠানোর কথা রয়েছে সংস্থাটির। তবে আমরা এখনো সেসব সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদনটি হাতে পাইনি। সেটি পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।