করোনা থেকে বাঁচতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর করণীয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক, দৈনিক সচিত্র মৈত্রী

জাতীয় নিরাপত্তায় যারা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের স্বাস্থ্যের খবর রাখেন কে?’ বর্তমান সময়ে পুরো পৃথিবী যখন গৃহবন্ধী পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছেন তখন সমাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কৃতিত্বের সাথে কাজ করছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং পুলিশ এই সারিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। করোনা মহামারীতে সমাজের সাথে সাথে নিজেদের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখাটা জরুরী। এক্ষেত্রে নিজের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়ার বিকল্প নেই। সাধারণ কিছু টিপস মানলে খুব সহজে নিজের যত্ন নেয়া যায়। সহজ এই টিপসগুলো সম্পর্কে জানাচ্ছেন শিকদার মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবীশ চিকিৎসক বেনজীর জাহাঙ্গীর।

শারীরিক ভাবে নিজেকে সুস্থ রাখার ৫টি টিপস

 

পানি পান করা

গ্রীষ্মকালীন সময়ে আমরা কম বেশি সবাই পানি শূন্যতায় ভুগী। তাই দিনে অন্তত ২ লিটার পানি পান করুন। পানির পাশাপাশি স্যালাইন এবং গ্লুকোজ খাবেন। এতে শরীর সতেজ থাকবে।

সময়মত খাবার খাওয়া 

নিয়মানুবর্তিতা শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  সময়মত খাবার না খাওয়ার জন্য আমাদের শরীরের অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। দেরী করে খাওয়া কখনোই ভালো অভ্যাস নয়। সময় এবং সুযোগের অভাবে আমরা ঠিক সময়ে খাবার খাই না। সেজন্য যখন খাওয়া শুরু করি তখন অতিরিক্ত খাওয়া হয়। এই দুই অভ্যাস স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। সঠিক সময়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে গ্যাস্টিক এবং আলসারের ঝুঁকি কমবে।

পুষ্টিকর খাবার খাওয়া 

কী খাবার খাচ্ছেন তার উপর শারীরিক সুস্থতা অধিকাংশ নির্ভর করে। তেল, চর্বি এবং মশল্লাযুক্ত খাবার থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। এসময় প্রোটিন এবং মিনারেলযুক্ত খাবার খাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন; দুধ, ডিম, কাজু বাদাম, মাশরুম, মাছ, মাংস ইত্যাদি।

ঔষধ খাওয়া বাদ না দেয়া

অনেকেই ডায়াবেটিস, প্রেশার, গ্যাস্টিক ইত্যাদি সমস্যার জন্য নিয়মিত ঔষধ সেবন করে থাকেন। কাজের চাপে ঔষধ সেবন বাদ দিবেন না। দরকার হলে মোবাইলে অ্যালার্ম সেট করুন অথবা আপনার সহকারীকে মনে করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব দিন। মনে রাখবেন, আপনি নিজে সুস্থ থাকলে আপনি অন্যের জন্য কাজ করতে পারবেন।

নিজের পরিচ্ছন্নতা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা

কাজের প্রয়োজনে বাহিরে থাকা আপনার জন্য নিত্যনৈমিত্তিক। তাই আপনার স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। যখনই সময় পাবেন ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নিন। দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করুন। মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লভস ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

 

শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও গুরুত্বপূর্ণ। মানসিকভাবে নিজেকে সুস্থ রাখতে মেনে চলুন নিচের ৫টি টিপস।

উত্তেজিত হয়ে তর্কে জড়াবেন না

বোকার সাথে তর্ক কিংবা তাকে কোন কিছু বোঝাতে চেষ্টা করা সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। উত্তেজিত হয়ে গেলে কথা বলা বন্ধ করে লম্বা লম্বা শ্বাস নিন।  ১০ থেকে উল্টা গননা করা শুরু করুন।  এতে খুব কম সময়ের মধ্যে আপনি শান্ত হয়ে যাবেন।

কাজের ফাঁকে নিজেকে ৫ মিনিট সময় দিন

বিরতিহীন কাজ আপনার মানসিক চাপ বাড়ায় এবং আপনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। তাই নিজের জন্য ৫ মিনিট বরাদ্ধ করুন।  এই ৫ মিনিট আপনি চোখ বন্ধ করে শান্তভাবে বসতে পারেন। পছন্দের কোন গান কিংবা কবিতা শুনতে পারেন। এই ৫ মিনিটের বিরতি আপনার কাজের গতি বাড়বে এবং আপনার মনকে শান্ত রাখবে।

রাতের ঘুম সুনিশ্চিত করুন

ঘুম সৃষ্টিকর্তার এক বড় নেয়ামত। আপনার রাতের ঘুম ভালো হলে আপনার সারাদিনের ক্লান্তি দুর হবে। অন্তত ৬ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।  যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তারা ঘুমানোর আগে ৫ মিনিট হাল্কা ব্যায়াম করতে পারেন।  এতে আপনার রক্ত চলাচল বাড়বে এবং তাড়াতাড়ি ঘুমাতে সাহায্য করবে।  ঘুমের আগে কোন রকমের ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন । ডিভাইস ব্যবহার মস্তিষ্ককে active রাখে এবং ডিভাইসের আলো আপনার চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করবে যা আপনার স্বাভাবিক ঘুমের জন্য ক্ষতিকর।

আশাবাদী মানুষের সাথে ১ মিনিট কথা বলুন

নেতিবাচক কথা কিংবা আলোচনা আমাদের মনবল কমিয়ে দেয়। মনোবল চাঙ্গা রাখা মহামারীর এই সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । তাই সবসময় আশাবাদী মানুষের সংস্পর্শে থাকবেন এবং কথা বলবেন। এতে আপনার মনোবল বাড়বে

সৌজন্যতা বজায় রাখুন

আমরা জীবনের একটা বড় অংশ কর্মক্ষেত্রে কাটাই। কর্মক্ষেত্রের ঘটনাগুলো আমাদের জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে।  সহকর্মীরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের মত।  তাদের সাথে সৌজন্যতা বজায় রাখুন এবং সহযোগিতা করুন। একটা পজেটিভ কর্মক্ষেত্র আপনার দিনকে সুন্দর করে গড়ে তোলে। তাই সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলার অভ্যাস করুন।

মহামারি এই সময়টাতে আমরা আতঙ্কিত। একে অন্যের সহযোগিতা, শ্রদ্ধা আর ভালবাসাই পারে মহামারির সময়টাতে স্বাভাবিক এবং সুন্দর করতে। তাই আসুন আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার পাশাপাশি নিজের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার প্রতিও আমরা যত্নশীল হই। প্রতিরোধের মাধ্যমে করোনা থেকে মুক্তি পেতে আমরা সবাই নিজ নিজ স্থান থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করি। সুস্থ থাকুন। সুন্দর থাকুন।

লেখক : বেনজীর জাহাঙ্গীর, শিক্ষানবীশ চিকিৎসক, শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

মৈত্রী/ এএ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *