নবগঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ নিয়ে আমার ভাবনা

পার্বত্য চট্টগ্রাম : সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি ও নির্যাতিত, নিষ্পেষিত জনগোষ্ঠীর অধিকার ভিত্তিক আন্দোলনের বিভিন্ন সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সবগুলো সংগঠন বিলুপ্ত করে দিয়ে সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে “পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ” গঠন করা হয়। এই সংগঠনের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে “পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ” এর আত্মপ্রকাশ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার মধ্যে দিয়ে জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি ঘোষণা করে কর্মসূচি দেয়া হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষনা আসন্ন, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অনেকে প্রার্থী হয়েছে। কমবেশি সবারই যোগ্যতা আছে। তবে এই সংগঠনকে যদি লক্ষ্যপাণে নিতে হয় তাহলে কিছু বিষয়ের প্রতি অবশ্যই নজর দিতে হবে।
পূর্বের সংগঠনে অনেকগুলো ব্যর্থতা দেখা গিয়েছিল, এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিনিয়রদের বিশেষ করে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগুলোর মধ্যে আন্দোলনের যাবতীয় বিষয়গুলো নিয়ে পর্যাপ্ত সমন্বয়হীনতার অভাব ছিল। পরস্পরের মধ্যে আস্থাহীনতা, অর্থ কলোঙ্কারি, গ্রুপিংসহ আরোও অনেক গুলো সমস্যা বিদ্যমান ছিল, যা একটি সংগঠনের ব্যর্থতার জন্য অনেকটাই দায়ী। এই সমস্যাগুলো কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা কমিটি পর্যায়ে পর্যন্ত ছিল।অদক্ষ, অযোগ্য, স্বার্থপর ও সুবিধাবাজদেরকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিষ্ঠা করার কারনে এই সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন যাবত স্থায়ীত্ব পেয়েছিল, যার কারনে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে ভাঙ্গন সৃষ্টি চরম আকার ধারণ করেছিল। সৎ, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত না হলে একটা আন্দোলনকে কখনো সফল ও স্বার্থক করে এগিয়ে নেয়া যায়না।

তাই “পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ” কে এগিয়ে নিতে হলে যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে :-
এক. সর্বপ্রথম সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও কর্মীবান্ধব নেতৃবৃন্দদেরকে যথাযথ পদে সেটআপ করতে হবে, এক্ষেত্রে তৃণমূলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া ব্যক্তিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ণ করতে হবে। নতুবা এই আন্দোলনকে সঠিক লক্ষ্যপাণে পৌঁছানো যাবেনা।
দুই. জবাবদিহিতামূলক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে, সংগঠনের আয়ের উৎস সম্পর্কে সকলেই অবহিত থাকবে।শুভাকাঙ্ক্ষী বলা ডোনার ও সংগঠনের সম্পদসহ সবগুলো থেকে নির্দিষ্ট একটি আয়ের ফান্ড থাকবে, আয়ের রশিদ ও ব্যয়ের বাউচার থাকতে হবে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদক এই চার জনের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।
তিন. কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র ২১ জনকে নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় মূলবডি থাকবে, এটি জেলা ও মহানগর পর্যায়ে ১১ জন এবং উপজেলা পর্যায়ে ৬ জন কে নিয়ে মূলবডি গঠণ করা হবে। সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো ধরনের কর্মসূচি দিতে হলে মূলবডির সদস্যদের সমন্বয়ে ও সকলের পরামর্শ, ঐক্যমতের ভিত্তিতে দিতে হবে।
চার. প্রতিমাসে কেন্দ্রীয় ও জেলা, উপজেলা শাখায় মূলবডির সদস্যদের নিয়ে একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে, সভায় আয়-ব্যয়ের যথাযথ হিসাব নিকাশ মূলবডির সদস্যদের সামনে সভাপতি কে তুলে ধরতে হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে। আয় ও ব্যয়ের হিসাব অর্থ সম্পাদকের কাছে রেকর্ড থাকবে, এক্ষেত্রে সভাপতিকে অর্থ সম্পাদকের কাছে বাধিত থাকতে হবে।
পাঁচ. কেন্দ্র ও জেলা, মহানগর শাখায় ছাত্রকল্যাণ ফান্ড থাকবে। শক্তিশালী প্রচার ও মিডিয়া বিভাগ থাকবে, নিয়মিত পোষ্টারিং, দেয়াল লিখন, সমসাময়িক পার্বত্য ইস্যু নিয়ে ম্যাগাজিন প্রকাশিত করতে হবে।
ছয়. কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার একমাসের মধ্যে গঠনতন্ত্র প্রকাশিত করতে হবে বই আকারে, গঠনতন্ত্রে নির্দিষ্ট কর্মসূচিগুলো তুলে ধরতে হবে। কর্মসূচিগুলোর যথাযথ কারণ তুলে ধরতে হবে। বাস্তবসম্মত, পরিস্থিতি সাপেক্ষ গঠনতন্ত্র প্রণয়নের দিকে নজর দিতে হবে এবং গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে সকলকে সম্মিলিতভাবে মাঠে ময়দানে সক্রিয় থেকে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।

পরিশেষে, আমি আশা করি সৎ,দক্ষ, যোগ্য ও কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে এবং স্বচ্ছতার সাথে জবাবদিহিমূলক সংগঠন গড়ে তুললে দুর্বার গতিতে আমাদের আন্দোলন এগিয়ে যাবে, কেউ ঠেকাতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ।

ইখতিয়ার ইমন
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি।
মোবাইল-০১৮৬৫-৩৯৮৭৫৭

মৈত্রী/এফকেএ/এএ

শেয়ার করুন: