লামায় গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় : মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্যবিধিও
মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি :
বান্দরবান : প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানা সহ অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের শর্তে গণ পরিবহন চালানোর অনুমতি দেয় সরকার। সে জন্য মালিকদের ক্ষতি পোষাতে ৬০ শতাংশ ভাড়াও বাড়ানো হয়। এরপরেও উপজেলার অভ্যন্তরীন ও বহি:সড়কে চলাচলকারী সিএনজি, অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা, জীপ ও বাসে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে চলেছে গণ পরিবহনগুলো। সেই সাথে মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্য বিধিও। এতে উপজেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধিসহ পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে। অতি কস্টে আছেন যাত্রী সাধারণ। যেসব গণ পরিবহন স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি সড়ক পরিবহন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা/প্রচলিত বিধি-বিধান অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট বাতিল করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
জানা যায়, গত দু মাস ধরে লক ডাউনের দোহাই দিয়ে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষাসহ সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে পরিবহন কর্তৃপক্ষ। লামা বাজার থেকে মধুঝিরি পর্যন্ত টমটমের ভাড়া ছিল ৫ টাকা, বর্তমানে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০টাকা। লামা থেকে চকরিয়া বাসের ভাড়া ছিল ৪০টাকা, বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ৭০টাকা, জীপ গাড়িতে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। লামা থেকে বান্দরবান ভাড়া ছিল ১২৫ টাকা, বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। লামা থেকে চট্রগ্রাম ভাড়া ২৫০ টাকা, বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। লামা থেকে ঢাকার ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা, বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ১৩০০ শত টাকা। একই ভাবে অন্যসব সড়কে চলাচলকারী যানবাহন গুলোতেও নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। আবার কিছু কিছু সময় দ্বিগুন ভাড়া। অথচ দূর পাল্লার যানবাহনের টিকেটে টাকা লেখা হচ্ছে নির্ধারিত ভাড়া। করোনায় মানুষের আয় কমলেও ভাড়া বাড়ার কারণে যাত্রীদের জন্য কস্টকর বলে জানান অনেকে। তাছাড়া জীবানুনাশক স্প্রে প্রয়োগসহ স্বাস্থ্য বিধি বাস্তবায়নেরও তেমন উদ্যোগ নেই সংশ্লিস্টদের।
সরজমিন লামা-রুপসীপাড়া, লামা-গজালিয়া, লামা-ক্যয়াজুপাড়া, লামা-আলীকদম ও লামা-চকরিয়া সড়কের বেশ কয়েকটি বাস, জীপ ও মাহিন্দ্রা গাড়িতে দেখা গেছে, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সামাজিক দুরুত্ব নিশ্চিত করে যাত্রী বহন করার কথা থাকলেও এসব সড়কে চলাচলকারী পরিবহনে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। ৪০ সিটের বাসে বিশ জন যাত্রী নেওয়ার কথা থাকলেও নেয়া হচ্ছে ৩০ জনের অধিক যাত্রী। কয়েক জনের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। এছাড়া জীবাণু নাশক স্প্রে করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছেনা পরিবহনগুলোতে। অন্য যানবাহন গুলোতেও একই অবস্থা চলছে বলে জানান যাত্রীরা।
সেলিম আহমদ ও আবদুর রহমান নামের দুই যাত্রী বলেন, আমরা আলীকদমের রেপার পাড়া বাজার থেকে মাহিন্দ্রা গাড়ি যোগে লামা বাজার আসছিলাম। আমাদের কাছ থেকে ৬০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। কারন জানতে চাইলে ড্রাইভার বলছে এটা নাকি নির্ধারিত। যাত্রী সোহেল,জসিম উদ্দিন, জহিরসহ অনেকে জানায়, আমরা লামা থেকে বাস গাড়ি যোগে চকরিয়া যাচ্ছি। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েও ভাড়া নির্ধারিত হারের চেয়ে অতিরিক্ত নেয়া হয়েছে। জীপ গাড়ি অর্ধেক যাত্রী নিলেও ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুন। এতে জরুরী কাজে যাতায়াত করা অসম্ভব ও কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেখা উচিৎ।
তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে চকরিয়া-লামা-আলীকদম ও বান্দরবান বাস মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল হোসেন ও জীপ মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু এক সূরে বলেন, লকডাউনের সময় প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া ও বিধি মোতাবেক যানবাহন চলছে। প্রশাসনের নির্দেশনা পেলে কয়েক দিনের মধ্যেই ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজা রশীদ বলেন, গণ পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে যান বাহন মালিক পক্ষের সাথে বৈঠক হয়েছে, তারা ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তিনদিন সময় চেয়েছেন। এর মধ্যে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণে না আনলে, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল জানান, লকডাউনের পূর্বে যে ভাড়া নির্ধারিত ছিল, সেটাই বহাল রাখতে বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। দ্রুত পরিবহন সেক্টরগুলোকে ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে।
মৈত্রী/এফকেএ/এএ