লামায় ফের বন্যহাতির তাণ্ডব : জুমের ফসল ও বসতঘর তছনছ
মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি
বান্দরবান : লামা উপজেলা সদর ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের পর এবার বন্যহাতির দল তাণ্ডব চালিয়ে তছনছ করে দিয়েছে গজালিয়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার ৩টি বসতঘর। শুধু তাই নয়, এ সময় হাতিগুলো পদপিষ্ট ও খেয়ে বড় বমু পাড়া, নতুন মুসলিম পাড়া, মাঝির ঝিরি ও গাইন্দ্যা পাড়ার ২৫ জন কৃষকের ২০ একর জুমের ফসল, ধান, বাঁশ, কলা বাগান ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে।
রবিবার দিনগত রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ১০-১২টির একটি বন্যহাতির দল তাণ্ডব চালিয়ে এসব বসতঘর, বাগান ও জুম ফসলের ক্ষতিসাধন করে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সহ ধর্মিনী ক্রাচিংপ্রু মারমার সঙ্গে সরজমিন পরিদর্শনে গেলে এ ক্ষয় ক্ষতির চিত্র ফুটে ওঠে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষকেরা আতংকিত ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। মঙ্গলবার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাতিগুলো মাঝির ঝিরির আগায় অবস্থান করায় আতংকে আছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
এলাকাবাসী জানায়, গহিন পাহাড় থেকে বন্যহাতির দল গত রবিবার দিনগত রাতে ইউনিয়নের বড় বমু পাড়ায় নেমে পড়ে। হাতিগুলো প্রথমে মো. ইউনুছের মাটির তৈরি বসতঘরটি ভাংচুর করার পর একে একে নতুন মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন, আবদুর রাজ্জাক, জাফর আলমের জমির ধান, থুইসাচিং মার্মা, মেদুখ্য মার্মা, হ্লাচিংউ মার্মা, মংহ্লামে মার্মা, মাপ্রু মার্মা, অংশৈ থোয়াই মার্মা, মংহ্লাসিং মার্মা, অংখৈচিং মার্মা, উসামে মার্মা, মংমেচিং মার্মা, ক্যশৈহ্লা মার্মা, ক্যচিংহ্লা মার্মা, মানুএ মার্মা, এক্যচিং মার্মা, মংশৈসিংসে মার্মা, মেগ্যউ মার্মা ও হ্লাশৈসিং মার্মার জুমের ফসল, বাঁশ, কলা বাগান পদপৃষ্ট ও খেয়ে নষ্ট করে দেয় হাতির দলটি। একই সময় হাতিগুলো কৃষক থুইচিং মার্মা ও মংহ্লাচিং মার্মার বসতঘর ভেঙ্গে দেয় ও একটি গরু মেরে ফেলে। সর্বশেষ সোমবার দিনগত রাতেও ৩জন কৃষকের জুমের ফসলের ক্ষতিসাধন করে হাতির দলটি।
হাতি আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্ত দেলোয়ার হোসেন সর্দার, ইউনুছ ও চাহ্লামং মার্মা বলেন, রবিবার দিনগত রাতে ১০-১২টি বন্যহাতি পাহাড়ের উত্তর পাশ দিয়ে গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ কথা জানাজানি হলে লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন। রাতে গ্রামের মানুষ এক ঘণ্টার জন্যও ঘুমাতে পারেনি। হাতি কখন কার বাড়িতে ঢুকে পড়ে, এই ভয়ে মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তারা আরও বলেন, হাতিগুলো প্রথমে বাড়ির চারিদিকে ঘেরাও করে ফেলে। বিশেষ করে ঘরের দরজা জানালার পাশে পাহারাদারের মত দাঁড়িয়ে থাকে। আর ঘর ভাঙ্গা শুরু করে। পরে ঘরে থাকা ধান চাল খেয়ে ফেলে। এরপর রাতভর পাহাড়ের জুমে উৎপাদিত ফসল, ধান, বাঁশ ও কলা গাছ খেয়ে ও পদপিষ্ট করে নষ্ট করে দেয়। রাত পোহালে হাতিগুলো পাহাড়ের জঙ্গলে ঢুকে পড়ে।
ক্ষতিগ্রস্তরা আরো বলেন, ধার কর্জ করে ফসল ও ফলদ বনজ বাগান সৃজন করেছি। এত কষ্টের উৎপাদিত ফসল তিন রাতেই শেষ করে দিলো হাতির দল। এখন ঘরে ফসল তোলা তো দূরের কথা, বরং কর্জের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো ভেবে কোন কূল পাচ্ছিনা।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য উচাছিং মার্মা ও গ্রাম পুলিশ আনিংসে মার্মা জানান, অনেক ক্ষেত্রে রাত জেগে আগুন জ্বালিয়ে, ঢোল পিটিয়ে ও চিৎকার করেও বন্যহাতির দলকে সরানো যায় না। বেশি ভয় দেখালে গায়ের দিকে তেড়ে আসে হাতিগুলো। এ কারণে চেয়ে দেখা ছাড়া আমাদের পক্ষে কিছুই করার থাকেনা। হাতিগুলোর তান্ডবে গত তিন দিনে স্থানীয় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বন্যহাতির তান্ডবে বসতঘর, জুমের ফসল ও ফলদ বনজ বাগানের ক্ষতিসাধণের সত্যতা নিশ্চিত করে গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা বলেন, মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত হাতিগুলো ইউনিয়নের মাঝিরঝিরির আগায় অবস্থান করায় লোকজন এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন। আবারও যে কোন মুহুর্তে তান্ডব চালিয়ে ক্ষতিসাধন করতে পারে। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়চার জানান, উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে কয়েকদিন ধরে ১০-১২টি বন্যহাতি তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। হাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরকে বন বিভাগের পক্ষ থেকে বিধি মোতাবেক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
মৈত্রী/এফকেএ/এএ