আলীকদমে চারটি প্রতিষ্ঠান গড়ে জাগরণ সৃষ্টি করেছেন উদ্যোক্তা অংশেথোয়াই
মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি
বান্দরবান : স্বপ্ন তো সবাই দেখে কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে পারে কয়জন! পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই স্বপ্নবাজ। কেউ কেউ কাঙ্খিত স্বপ্নের সাফল্যর চূড়ায় পৌঁছাতে পারে কেউবা ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়। ব্যর্থতা জানা সত্ত্বেও যারা চেষ্টা করে যায় তারই আজ সফল। এমনই এক যুব উদ্যোক্তা অংশেথোয়াই মার্মা। মাধ্যমিক স্কুলের গন্ডি পেরানোর পরপরেই তিনি স্বপ্ন পূরণের যুদ্ধে নামেন। তিনি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রয়াত সদস্য ও আলীকদম উপজেলার বাসিন্দা থোয়াইচাহ্লা মার্মার জ্যোষ্ঠ সন্তান। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে একমাসের প্রাতিষ্ঠানিক মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেই প্রশিক্ষণের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ২০ বছরে ৪টি আয়বর্ধণ ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান সহ বেকারত্ব দূরীকরনে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করে জাগরণ সৃষ্টি করেছেন অংশেথোয়াই মার্মা।
জানা যায়, পাহাড়ি জনপদ আলীকদম উপজেলার বাসিন্দা অংশেথোয়াই মার্মা ছাত্র অবস্থাতেই ছিলেন একজন যুব সংগঠক। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০০১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠানিক মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। এরপর থেকে পুঁজি যোগাড়ে তৎপর হন। অবশেষে ২০০৭ সালে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার নিজস্ব মূলধন নিয়ে বাবার জমিতে শুরু করেন পাহাড়ি জলাশয় সৃষ্টি করে মৎস্য চাষ। পাশাপাশি পাহাড়ের ঢালু জমিতে কৃষিজাত পন্য উৎপাদন, রাবার বাগান, মিশ্র ফলজ বাগান, গৃহপালিত পশু পালন শুরু করেন এ অংশেথোয়াই মার্মা। প্রকল্পটি শুরুর পর তিনি তৎসময়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। এছাড়াও কৃষি ব্যাংক থেকে ১ লাখ এবং আত্মীয়-পরিজন থেকে ঋণ নেন আরো ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। সর্বসাকুল্যে তার প্রাথমিক পুঁজি ৪ লাখ টাকা। প্রকল্পে ৫ বছরে মূলধনসহ তার লভ্যাংশ দাঁড়ায় ৮ লাখে। ফলশ্রুতিতে ২০১২ সালে সরকার অনুমোদিত ঠিকাদার ও সরবরাহকারী হিসেবে লাইসেন্স সংগ্রহ করে ঠিকাদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন অংশেথোয়াই মার্মা।
শুধু তাই নয়, এ যুব উদ্যোক্তা ব্যবসার পাশাপাশি পাহাড়ি জনপদে শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নেও রেখেছেন নানান অবদান। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য উপজেলা সদরে ২০০৮ সালে আলীকদম মৈত্রী হাইস্কুল প্রতিষ্ঠাকালে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আলীকদম আইডিয়াল স্কুল (প্রস্তাবিত কলেজ) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি। বর্তমানে তিনি এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এদিকে নিজের বেকারত্ব রোধসহ অংশেথোয়াই মার্মার হাতে গড়া চারটি প্রতিষ্ঠানে ৪১ জন বেকার তরুণ-যুবক চাকরি করছেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারী চাকরি করছেন।
উদ্বোক্তা হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অংশেথোয়াই মার্মা তার পূর্বাপর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে জানায়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণটি তার ব্যবসায়িক জীবনের উৎকর্ষতার পেছনে অনন্য অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, পাহাড়ি উপজেলা আলীকদমের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটক বাড়ছে। তাই পর্যটকদের সুবিধা দিতে ২০১৯ সালে ‘দ্যা দামতুয়া ইন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট’ একটি প্রতিষ্ঠান গড়েন তিনি। তার আশা এ ধরণের আরো প্রতিষ্ঠান আলীকদমে গড়ে উঠলে এ জনপদের দ্রুত উন্নতিসাধন হবে। ২০২০ সালের শেষের দিকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আরো একটি প্রতিষ্ঠান ‘দ্যা দাতুয়া ফুডস্’। এ প্রতিষ্ঠানের আওতায় আলীকদম বাজারে চালু আছে বনফুল এন্ড কোং এর একটি শাখা।
এ ব্যাপারে আলীকদম উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পুলুপ্রু বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সব সময়ই উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ ধারাবাহিকতায় যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অংশেথোয়াই মার্মা আজ একজন সফল উদ্যোক্তা। ইতিপূর্বে তার সব কটি প্রতিষ্ঠান আমি পরিদর্শন করেছি। সে একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে গোটা বান্দরবানে জাগরণ সৃষ্টি করেছে। তাকে দেখে অনেকের শিক্ষা নেয়া উচিত। চাকরির পেছনে না ঘুরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে যে বেকারের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জীবনে সফল হওয়া যায় তার একটি প্রমাণ অংশেথোয়াই মার্মা।
মৈত্রী/এফকেএ/এএ