ভূরুঙ্গামারীতে গরুর খামার গড়ে স্বাবলম্বী রসুল উদ্দিন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

কুড়িগ্রাম : গরুর খামার দিয়ে পরিবারের অসচ্ছলতা দুর করে স্বাবলম্বী হয়েছেন রসুল উদ্দিন। খামারের আয় দিয়ে তিনি জমি কিনেছেন, নির্মাণ করেছেন পাকা বাড়ি। সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। তার দেখাদেখি ওই গ্রামের অনেকেই গরু পালন করছেন। রসুল উদ্দিন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী কামারটারী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে। বর্তমানে তার খামারে শাহীওয়াল জাতের গাভী ও বাছুর সহ ১৯টি গরু রয়েছে।

সংসারের সচ্ছলতা আনতে মাত্র বারো বছর বয়সে কাজের সন্ধানে ১৯৮৯ সালের দিকে ঢাকার বিক্রমপুরে চলে যান রসুল উদ্দিন। মাসিক ৪৫০ টাকা বেতনে তিনি সেখানে একটি ডেইরি খামারে কাজ শুরু করেন। প্রায় চার বছর খামারে কাজ করে কিছু টাকা জমিয়ে বাড়ি ফিরে সেই টাকা দিয়ে ১৯৯৩ সালের দিকে দুইটি দেশী জাতের গাভী কিনে লালন পালন শুরু করেন। কিন্তু সেই সময় বাজারে দুধের তেমন চাহিদা না থাকায় তাকে গাভী দুথটি বিক্রি করে দিতে হয়। দুই বছর পর ৪ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে তিনি একটি শাহীওয়াল ও একটি ফ্রিজিয়ান জাতের এঁড়ে বাছুর কিনে মোটাতাজাকরণ শুরু করেন। ষাঁড় দুইটি বিক্রি করে তিনি বেশ লাভবান হন। এতে তার অসচ্ছলতা কমতে শুরু করে। এভাবে গরু মোটাতাজা করতে করতে ২০০৭ সালে তার খামারে ১৩টি গরু হয়।

এসময় এনথ্রাক্স মহামারি দেখা দিলে গরু বিক্রি কমে যাওয়ায় তিনি মহাবিপদে পড়েন। অদম্য রসুল তৎকালীন পশুসম্পদ কার্যালয়ে গরুর এনথ্রাক্স পরিক্ষা করিয়ে এনথ্রাক্স মুক্ত গরু সনদ নিয়ে ১৩টি গরু ঢাকাতে নিয়ে গিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এনথ্রাক্স মহামারির আশঙ্কায় তিনি গরু মোটাতাজাকরণ বন্ধ করে দেন।

অপরদিকে বাজারে দুধের চাহিদা বাড়তে থাকলে ২০০৮ সালের দিকে তিনি আবার দুথটি শাহীওয়াল ও একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী পালন শুরু করেন। দুধ ও বাছুর বিক্রি করে লাভ হওয়ায় তার খামারে গাভীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে তার খামারে গাভীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪টি। খামারের আয় দিয়ে ২০১৬ সালে তিনি প্রায় ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের ছয় বিঘা জমি ক্রয় করেন। এছাড়া প্রায় দশ লাখ টাকা দিয়ে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনসেড পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন। বর্তমানে তার খামারে ১১টি শাহীওয়াল জাতের গাভী ও ৮টি বাছুর রয়েছে। গরুগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা।

গাভীগুলো দৈনিক দুই বেলা দহন করা হয়। প্রতিটি গাভী ১০ থেকে ২০ লিটার দুধ দেয়। দৈনিক ১১০ থেকে ১২০ লিটার দুধ বিক্রি করেন তিনি। এতে দৈনিক সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা আসে। এছাড়া প্রতি বছর তিনি গড়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার গরু বিক্রি করেন। তার খামারে দৈনিক চারজন লোক কাজ করেন।

অভাবের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরোতে না পারা রসুল উদ্দিন তার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করাতে চান। তার বড় সন্তান স্নাতক সম্মান শ্রেণির ২য় বর্ষে শিক্ষার্থী। মেঝো সন্তান এসএসসি পরীক্ষার্থী। ছোট সন্তানের বয়স দুই বছর।

রসুল উদ্দিন জানান, অসুস্থ বাবা, মা, আমি আর ছয় বোনকে নিয়ে আমাদের পরিবার। আমি সবার ছোটো। অসুস্থতার কারণে বাবা কাজ করতে পারতেন না। নয়জনের ভরণপোষণ করতে গিয়ে আমাদের জায়গা জমি যা ছিল সব বিক্রি করা শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভিটেমাটি পর্যন্ত ছিল না। অভাবের সংসারে ঠিক মতো খাবার জুটতো না। সংসারের হাল ধরতে বারো বছর বয়সে আমাকে বাবা প্রতিবেশী এক ভাইয়ের সাথে ঢাকা পাঠিয়ে দেন। সেখানে গরুর খামারে কাজ করি। খামারে কাজ করার অভিজ্ঞতা গরু পালন করতে উৎসাহ ও সাহস জুগিয়েছে। কঠোর পরিশ্রম, অসীম সাহস আর ধৈযের্যর কারণে শূণ্য থেকে আজকের এই অবস্থানে আসতে পেরেছি।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শামীমা আক্তার বলেন, রসুল উদ্দিন একজন আদর্শ খামারী। তিনি শূণ্য থেকে শুরু করে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রসুল উদ্দিনের গরুর খামার যুব সমাজকে আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

মৈত্রী/এফকেএ/এএ

শেয়ার করুন: