আলীকদমে সাড়ে ৬ কোটি টাকার কাজ : বৃষ্টির মধ্যেই কার্পেটিং
মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি
বান্দরবান : বিটুমিনের প্রধান শত্রু পানি। এজন্য বর্ষা মৌসুমের আগেই কার্পেটিং কাজ বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু তা না মেনে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৬ কোটির টাকা ব্যয়ে রাস্তায় ময়লাযুক্ত ও বৃষ্টিতে চলছে সড়ক কার্পেটিং এর কাজ। আর এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হলে তোলপাড় শুরু হয় সচেতন নাগরিকদের মধ্যে। আর এই কাজটি করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্তাদের যোগসাজসে এ কাজটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয়, এলজিইডি‘র কাজে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের অভিযোগ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে থাকলে সেই ঠিকাদারদের পছন্দের তালিকায় রেখে বিভিন্ন কৌশলে কাজ দিচ্ছে এলজিইডির কর্তারা। বারবার অনিয়মের ঘটনা ঘটলে কার্যত নিরব দর্শকের ভূমিকায় কর্তৃপক্ষ। ফলে বার বার অনিয়ম করেও পার পাচ্ছেন এ ঠিকাদার।
গত শনিবার (২১ মে) প্রচন্ড বৃষ্টির পানিতে ও কাদাঁমাটিতে স্থানীয় বিএনপির নেতা, ঠিকাদার আবু বক্করের নিয়োজিত শ্রমিকরা সড়কের কার্পেটিং করেছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে তুমুল সমালোচনা সৃষ্টি হয় উপজেলায় ও উক্ত কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন স্থানীয়রা।
রবিবার সরজমিনে দেখা যায়, ওয়াহ্লা কারবারী পাড়ায় নির্মানাধীন সড়কে মাটিযুক্ত ও অপরিষ্কার, গাছের পাতা, ডাল রাস্তায় পড়ে আছে তার উপর রাস্তায় কাপেটিংয়ের কাজ করছেন ঠিকাদারের শ্রমিকরা। কাজে নিম্মমানের বিটুমিন,ময়লাযুক্ত বুজুরি ও অপরিষ্কার পাথরের সংমিশ্রণে রাস্তার কার্পেটিং কাজ করছেন ঠিকাদার। পাশে উপজেলা এলজিইডির অফিস সহায়ক দাড়িয়ে থাকলেও কোন প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।
এলজিইডি আলীকদম অফিস সূত্রে জানা যায়, নয়াপাড়া ইউনিয়নের এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা’র ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের অধীনে ৬ কোটি ১৮ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকায় ৫ প্যাকেজে সড়ক উন্ননের নামে কার্পেটিং কাজটি দেওয়া হলেও মূল কার্পেটিং কাজটি করছেন ঠিকাদার আবু বক্কর।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, আবু বক্কর যেসব কাজ করেছেন, সবই নিম্মমানের। তাই রাস্তার কার্পেটিং উঠে গেছে। তবুও বার বার তাকে কাজ দিচ্ছেন এলজিইডির কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারণে। কাজের মান ও স্থায়ীত্ব কতটুকু তা সময় বলে দেবে। সরকারের টেকসই উন্নয়ন, এমন ঠিকাদারের কারণে বাধা গ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে দেন ঠিকাদার। শুধু আলীকদম নয়, বান্দরবান এলজিইডি এখন জামাত-বিএনপির ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রনে, ফলে জেলার অধিকাংশ উন্নয়ন কাজ তারা বিভিন্ন কৌশলে ভাগিয়ে নিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে।
স্থানীয় ওচাইমং মার্মা ও মচিং মার্মা বলেন, রাস্তা কার্পেটিং করার আগে বিটুমিন ব্যবহারের কথা থাকলেও তা ব্যবহার করছেন নামমাত্র। শনিবার বৃষ্টির পানি ও কাদাঁমাটি পানির উপর দিয়ে কার্পেটিং করছিল ঠিকাদারের লোকজন। বৃষ্টিতে কাজ না করতে নিষেধ করলে ঠিকাদার আমাদের হুমকি দেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) লোকজনের উপস্থিতিতে ঠিকাদার নিজের মর্জিমত কাজ করেন।
এই ব্যাপারে ঠিকাদার আবু বক্কর সাংবাদিকদের বলেন, সকালে বৃষ্টি না থাকায় কাপেটিং কাজ চলেছে। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কার্পেটিংয়ের মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে তাই শ্রমিকরা রাস্তায় ব্যবহার করেছেন। ময়লা ও কাদাঁপানিতে কিভাবে কার্পেটিং করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, হালকা ময়লা থাকবে বর্ষার দিনে। কাজ করার সময় অফিসের লোকজন থাকে তারা কেন বাধা দিচ্ছেন না।
এ বিষয়ে আলীকদম উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ বলেন, বৃষ্টিতে যতটুকু কার্পেটিং করেছে ঠিকাদার, পরিদর্শনে গিয়ে সবটুকু তুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কার্পেটিং করার সময় রাস্তায় কোন ময়লা থাকতে পারবে না। বৃষ্টিতে কাজ বন্ধ রাখার জন্য প্রতি বছর এলজিইডি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চিঠি দিলেও এখনও পর্যন্ত কোন চিঠি পাননি বলে জানান উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ। সড়কের কাজ শতভাগ মান সম্মত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
মৈত্রী/এফকেএ/এএ