প্রধানমন্ত্রীর সমীপে এক কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তার খোলা চিঠি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
আসসালামুআলাইকুম। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে লিখছি।

বাংলাদেশের কৃষিখাতকে এগিয়ে নিতে দুটি আর্থিক প্রতিষ্টান নিরবে কাজ করে যাচ্ছে –
১.বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)
২.রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)

দেশের কৃষিখাতে আজ অভাবনীয় অগ্রগতি,দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন। এই কৃতিত্বের অন্যতম অংশীদার এই দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মী হিসেবে আমি গর্বিত। কিন্তু আমাদের মুখে হাসি নেই, মনে শান্তি নেই। চাপা একটা কষ্ট সবসময় আমাদের কাঁদায়। কারন স্বাধীন দেশে আমরা পরাধীনতার শেকলে বন্দী।

১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংগালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে ২৭ নং আদেশবলে প্রতিষ্ঠা করেন “বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক”(বিকেবি)। সেই থেকে অদ্যাবধি দেশের কৃষিখাতকে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।ব ঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠানে শকুনের কালো চোখ পড়ে ১৯৮৬ সালে। তৎকালীন সৈরশাসক এর ১৯৮৬ সালের ৫৮ নং কালো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের তৎকালীন রাজশাহী বিভাগের শাখাগুলো নিয়ে ১৯৮৭ সালের ১৫ মার্চ জন্মলাভ করে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক(রাকাব)।বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) নাম থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম পরিচালনা করে ৪৮ টি জেলায় অন্যদিকে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) নাম হলেও প্রতিষ্টানটি কার্যক্রম পরিচালনা করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ টি জেলায়। প্রতিষ্ঠান দুটির কার্যক্রমে বিন্দুমাত্র ভিন্নতা নাই। ৫৮ নং কালো অধ্যাদেশের কারনে প্রতিষ্ঠান দুটির হাজার হাজার কর্মচারীর দুর্ভোগ চরমে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার যেসকল নাগরিক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)এ চাকরি করেন তারা কখনো নিজের জেলা তো দূর নিজের বিভাগে কখনো চাকরি করতে পারবেন না। অন্যদিকে বাকী ৪৮ টি জেলার যেসকল নাগরিক রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)এ চাকরি করেন তারাও একই সমস্যায় ভুক্তভোগী। চাকরীর শেষ দিকে এসে বৃদ্ধ বয়সে দুর্ভোগ আরো চরমে। যার কারনে এইসব চাকরিজীবিদের মনে একটা চাপা কষ্ট সবসময় কাজ করে।

মাননীয় বঙ্গবন্ধু কন্যা
আমার বাড়ী একটা সাবেক ছিটমহলের পাশে। ছিটমহলের মানুষদের দুঃখ কষ্ট বঞ্চনা নিজের চোখে দেখেছি। ঐসব ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বঞ্চনার ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটেছে আপনার সাহসী পদক্ষেপে ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে। ছিটমহল ছিল দুটি পৃথক দেশের সমস্যা। অথচ স্বাধীন এই দেশে ৩৬ বছর থেকে ছিটমহলবাসীর মত চাকরি করেছে এবং এখনো করছে হাজারো মানুষ যাদের দুঃখ দুর্দশা চরমে। দুটি দেশের সমস্যা যদি সমাধান করা যায় তাহলে দেশের ভিতরের এই সমস্যা সমাধান করতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। আইন-অধ্যাদেশ মানুষের কল্যানের জন্য, মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্য নয়। যে অধ্যাদেশের কারনে মানুষের দুর্ভোগ হয় বুঝা যায় সেটার প্রয়োজন নেই।

আপনার গঠিত সরকারের সদ্য প্রয়াত অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাহেব বলেছিলেন দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ঢেলে সাজানো হবে, কিছু ব্যাংক একিভূত করা হবে। আমরা এই দুই প্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগী কর্মীরা আশায় বুক বেধেছিলাম। কিন্তু এর কোন বাস্তব অগ্রগতি পরলক্ষিত হচ্ছে না। স্বাধীন দেশের ভিতরে আমরা ছিটমহলবাসীর মত পরাধীন হয়ে আছি। ব্যাংক দুটি একিভূত করতে আমি জানিনা আইনগত কোন সমস্যা আছে কিনা। যদি থেকেই থাকে তবে ব্যাংক দুটিকে সারাদেশে কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিন। সোনালী, জনতা, অগ্রনী, রুপালী একই ধরনের সরকারী বানিজ্যিক ব্যাংক হয়েও যেহেতু সারাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে সেহেতু বিকেবি এবং রাকাব কেও অনুমতি দেওয়া হোক। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এত বড় দেশ হওয়া সত্বেও সম্প্রতি তাদের ২৭ টি ব্যাংক একিভূত করে ১২ টি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।সেখানে আমাদের মত ছোট দেশে কেন আমরা দুটি ব্যাংক একিভূত করতে পারব না। আমাদের দেশে ইতিপূর্বে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) এবং বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (বিএসআরএস)-কে একীভূত করে বিডিবিএল গঠিত হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে মমতাময়ী মা বলা হয়। তাই মায়ের কাছে সন্তান হিসেবে অনুরোধ প্রতিষ্ঠান দুটিকে একিভূত করুন অথবা সারাদেশে কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিন। ভুক্তভোগী হাজার হাজার কর্মী এবং তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফুটবে। ছিটমহল বিনিময় করে যেমন ইতিহাস রচনা করেছেন বঙ্গবন্ধুর নিজহাতে গড়া প্রতিষ্ঠানকে স্বরুপে ফিরিয়ে এনে আরেকটা ইতিহাস রচনা করুন।

মো. কামরুল হাসান
মুখ্য কর্মকর্তা
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক

মৈত্রী/এফকেএ/এএ

শেয়ার করুন: