বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে চিরতরে মুছে দিতেই পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড: পলক
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে আজ (১৭ আগস্ট ২০২২) আইসিটি টাওয়ারের অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর আগারগাঁও-এ আইসিটি বিভাগের পক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিটি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি বলেন, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প দিয়েছিলেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট সজীব ওয়াজেদ এর অনুপ্রেরণায় গত ১৩ বছরে প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে শহর-গ্রাম, ধনী-দরিদ্রদের মধ্যে কিছুটা হলেও বৈষম্য দূর করা সম্ভব হয়েছে। নারী-পুরুষের বিভেদ, বৈষম্য দূর করার চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৭১ এর পরাজিত অপশক্তি পরাজয়ের গ্লানির প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই ঘাতকচক্র শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের, এমনকি ১০ বছরের নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেলকেও হত্যা করেছে। কারণ তারা চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানেও যেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কেউ তার আদর্শকে ধরে রাখতে না পারে। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরী ও অনুসারী কেউ যেন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা লালন করতে না পারে তার জন্য এ হত্যাকান্ড।
পলক বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিভেদের যে বিষবৃক্ষ রোপন করা হয় তার শাখা, প্রশাখা আজ বিস্তৃত। তিনি বলেন জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ এবং অপপ্রচার করে একটি বিভক্ত সমাজ তৈরি করতে চেয়েছিল। তিনি বলেন সরকার পরিবর্তন হয় কিন্তু ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী এবং যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটনকে নিয়ে কখনও সমালোচনা করতে শোনা যায় না। পচাত্তার পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযোদ্ধ এবং স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। তিনি আরও বলেন যে মানুষ মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকেন তাকে কেউ মারতে পারে না। বঙ্গবন্ধু সবসময় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতেন। মৃত্যুকে ভয় পেতেন না। বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করলেও ঘাতকেরা তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি।
প্রতিমন্ত্রী ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যা নিচক একটি হত্যাকান্ড নয় উল্লেখ করে বলেন এটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চিরতরে নসাৎ করার একটি সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা এবং ডক্টরেট দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী পৃথিবীর ২০০টি রাষ্ট্রে পালিত হয়েছে। এখন প্রত্যেককে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে সোনার মানুষে পরিণত হতে হবে। তিনি সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহ সকলকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করার জন্য আহ্বান জানান।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, কেন ঘটেছিল বঙ্গবন্ধু-হত্যা, সেটা বোঝার জন্য হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাধারার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তথা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়বিরোধী দক্ষিণপন্থী শক্তি ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা-গোষ্ঠী। অস্ত্রধারী ঘাতক গোষ্ঠী যখন মেজর জেনারেল খালেদ মোশররফের পাল্টা-অভ্যুত্থানে কিছুটা বেসামাল অবস্থায় পড়েছিল, তখন কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশত্যাগ করে এবং পাকিস্তানের যোগসাজশে আশ্রয় পায় লিবিয়ায়, মুয়াম্মার গাদ্দাফির তথাকথিত ইসলামি বিপ্লব বা সবুজ বিপ্লবের দেশে।
এর আগে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হতে পাঠ, ১৫ আগস্টে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে ০১ (এক) মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) বিকর্ণ কুমার ঘোষ মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অবদান, বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র দর্শন ও সোনার বাংলা বিনির্মাণে পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রাষ্ট্রের চরিত্র বদলে যায়। সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা উঠিয়ে দেয়া হয়। দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও শক্তির উত্থান ঘটে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তারা অধিষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে আইসিটি বিভাগ ও এর আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ উপস্থিত ছিলেন। আইসিটি বিভাগের সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
মৈত্রী/এফকেএ/এএ