শনিবার থেকে লামার ৮ মন্ডপে শুরু দূর্গাপুজা

মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি :

বান্দরবান : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা। শনিবার (১ অক্টোবর) মহা ষষ্ঠীর দিন মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলন ও দেবীর মুখোন্মোচনের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে এ দুর্গোৎসব। প্রতি বছরের মত এ বছরও উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের ৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদ্যাপন হতে চলছে। এসব পূজা মন্ডপে কারিগরদের নিপূণ হাতের ছোঁয়ায় সজ্জিত হয়েছে দেবীদুর্গা সহ অন্যান্য দেবী-দেবতা। ৫ অক্টোবর দশমী তিথিতে মাতামুহুরী নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এ উৎসব। এবারের পুজায় কেন্দ্রীয় হরি মন্দির মন্ডপে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে‘ প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত ‘আরতি প্রতিযোগিতা’। পূজায় দেবী দুর্গাকে বরণ করতে ভক্তরা এখন উদগ্রীব। তাদের আয়োজনও কম নয়। বড়দের পাশাপাশি ছোটদের আনন্দ আরও বেশি। নতুন জামা-কাপড় কিনতে এখনিই কাপড়ের দোকানগুলোতে ভীড় জমাচ্ছে হিন্দু ধর্মালম্বী নারী-পুরুষেরা। এদিকে মহালয়া থেকে শুরু করে শারদীয় উৎসবের সব ক্ষেত্রেই থাকছে স্বাস্থ্যবিধির কড়া নির্দেশনাও। পঞ্জিকা অনুযায়ী, গত ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে মর্তলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে দেবী দুর্গাকে।

এদিকে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদ্যাপনের লক্ষ্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ও আলীকদম সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। পুজাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি কে প্রধান পৃষ্টপোষক ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈহ্লা, জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ও পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলামকে পৃষ্টপোষক করে গঠন করা হয়েছে পুজা উদযাপন কমিটিও। এছাড়া দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণ রুপ দিতে প্রতিটি মন্ডপে মন্ডপে গঠন করা হয়েছে উদ্যাপন কমিটি। এ কমিটির সভাপতি হলেন বাবুল দাশ, সাধারণ সম্পাদক হলেন বিজয় আইচ, সহ সভাপতি হলেন রতন দত্ত ও অর্থ সম্পাদক হলেন গোপন চৌধুরী। আজ শনিবার চলছে মন্ডপগুলোতে চলছে সাজসজ্জার কাজ। পূজার আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে পুজারি থেকে শুরু করে কর্মব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরাও।

পৌরসভা ও উপজেলার কয়েকটি পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিলতিল করে গড়ে তোলা হয়েছে দেবীদুর্গা সহ অন্যান্য দেবী-দেবতা। সেই দেবী দেবসতার মূর্তিতে রং তুলির কাজে এতদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। কারণ ১ অক্টোবর মন্ডপ কমিটিকে প্রতিমা বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রতিটি মন্ডপে প্রতিমা শিল্পীদের নিপুণ আঁচড়ে তৈরি হচ্ছে এক একটি প্রতিমা। অতি ভালোবাসায় তৈরি করা হয়েছে দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ এর মূর্তি। এ সময় প্রতিমা তৈরির শিল্পী বাবুল ভট্টাচার্য্য জানায়, গত চার পাঁচ দিন আগে প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ হয়। গেল কয়কেদিন শুধু প্রতিমাকে রং-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা আর সাজ সজ্জার কাজ চলেছে।

এ বিষযে লামা কেন্দ্রীয় দুর্গা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিজয় আইচ ও অর্থ সম্পাদক গোপন চৌধুরী এক সূরে জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পুজা উদযাপন করে থাকি। গত বছর মন্দিরে হামলার কারণে উৎসাহ উদ্দীপনায় উৎসব পালন করা যায়নি। আশা করি এবারে সকলে মিলেমিশে এ উৎসব উদ্যাপন করতে পারবো। এবারে আমাদের মন্ডপে প্রায় ৬-৭ লাখ টাকা খরচ হবে। তারা বলেন, প্রতিবছরের ন্যয় এবছরও পুজার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, আলীকদম সেনাবাহিনী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। দুর্গাপূজাকে উপজেলাব্যাপি উৎসবমূখর পরিবেশে উদযাপনে উপজেলার ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তারা। একই কথা জানালেন ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের গুলিস্তান বাজার, ইয়াংছা, পাগলির আগা, কমিউনিটি সেন্টার, আজিজনগর ইউনিয়নের তেলুনিয়া, মেরাখোলা ও পৌরসভার চম্পাতলী মন্ডপ কমিটির সদস্যরা। মেরাখোলা মন্ডপ কমিটির সাগর চন্দ্র দাশ বলেন, প্রতি বছরের মত এবারও শান্তিপুর্ণভাবে পুজা উদযাপন করতে পারবো বলে আশা করছি। এবারে মেরাখোলা হরি মন্দির মন্ডপে ৩-৪ লাখ টাকা খরচ হতে পারে বলেও জানান তিনি।
এদিকে কেন্দ্রীয় হরি মন্দির পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি বাবুল দাশ জানায়- শনিবার থেকে শারদীয় দুর্গাপূজাকে উৎসবমূখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষে ইতোমধ্যে সকল ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এবারও লামা পৌরসভা এলাকায় দুইটি, লামা সদর ইউনিয়নে একটি, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে চারটি, আজিজনগর ইউনিয়নে একটিসহ মোট ৮টি মন্ডপে পুজা অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, পূজা উপলক্ষে আমরা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। মন্ডপে পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম পুলিশের সদস্যরাও কাজ করবে। আমরা মন্দির কর্তৃপক্ষ গুলোর সাথে নিয়মিত আলোচনা করছি এবং সমন্বয় করছি। প্রতিটি মন্ডপে আনসার ও গ্রাম পুলিশ সদস্যরা ২৪ ঘন্টা ডিউটি করবে এবং আমাদের পুলিশ সদস্যরা টহল ডিউটিতে থাকবে। আশা করছি এবার সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে এই ধর্মীয় উৎসব শেষ হবে।

লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। যথাযথভাবে এ দুর্গাপুজা পালনের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রতিটি মন্ডপে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মৈত্রী/এফকেএ/এএ

শেয়ার করুন: