নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ডিজিএফআই কর্মকর্তাসহ ২জন নিহত, র্যাব সদস্য গুলিবিদ্ধ
মুহাম্মদ আলী, বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি :
বান্দরবান : নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে র্যাবের একটি দলের উপর মাদক চোরাকারবারী রোহিঙ্গাদের শসস্ত্র সংগঠন আল ইয়াকিন এর সদস্যদের হামলায় এক ডিজিএফআই কর্মকর্তা ও এক রোহিঙ্গা নারী গুলিতে নিহত হয়েছে, এসময় এক র্যাব সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়। নিহত স্কোয়াড্রন লিডার হলেন, রেজোয়ান রুশদি (বিডি নাম্বার ৯৭০১ ) এবং রোহিঙ্গা নারী সাজেদা বেগম (২০)। আহত র্যাব সদস্যের নাম সোহেল বড়ুয়া (৩০)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত আটটার দিকে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রুর কোনারপাড়া সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। সীমান্ত চোরাকারবারী আল ইয়াকিন এর সদস্যরা মাদক ও অস্ত্র নিয়ে আসছে এমন খবর পেয়ে অভিযানে যায় র্যাব। এসময় র্যাবের উপর আল ইয়াকিন সন্ত্রাসীরা হামলা চালালে দুইজন নিহত ও র্যাব সদস্য আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। নিহত রোহিঙ্গা নারী সাজেদা বেগম তুমব্রু কোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৯ নাম্বার ব্লকের নুরুজ্জামানের মেয়ে।
তুমব্রু সীমান্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বলেন, অভিযান চলাকালে সন্ত্রাসীরা র্যাবের উপর গুলিবর্ষণ করে, এতে রোহিঙ্গা মহিলা মারা গেছে।
আরো জানা গেছে, ঘটনায় র্যাব সদস্য সোহেল বড়ুয়া গুলিবিদ্ধ হলে তাকে সোমবার রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে তার অপারেশন সম্পন্ন হয়। কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক নিত্যানন্দ দাশ মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, রাত পৌণে ১০ টার দিকে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত এক র্যাব সদস্যকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) দিনগত রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, র্যাব এবং ডিজিএফআইয়ের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযান পরিচালনাকালে সোমবার মাদক চোরাকারবারি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ হয়। মাদক চোরাচালানকারীদের সঙ্গে এই সংঘর্ষ চলাকালে মাদক চোরাকারবারিদের গুলিতে দায়িত্বরত অবস্থায় ডিজিএফআই’র একজন কর্মকর্তা (বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা) দেশের জন্য আত্মত্যাগ করে শহীদ হন এবং র্যাবের একজন সদস্য আহত হন।
এদিকে বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানের কারনে গত ১৭ অক্টোবর থেকে জেলার রুমা ও রোয়াংছড়ি এবং ২৩ অক্টোবর থেকে থানচি ও আলীকদম উপজেলায় পর্যটক যাতায়তে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও আলীকদমে প্রত্যাহার করা হয়, অন্য ৩ উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা ফের আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গত ২০অক্টোবর জেলার রোয়াংছড়ি ও রাঙামাটি বিলাইছড়ির সাইজামপাড়ার দূর্গম এলাকায় যৌথ বাহিনীর ১০ দিনের অভিযানে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৭জন ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর ৩জনসহ মোট ১০ সদস্য কে বিপুল পরিমান অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরাঞ্জামসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব, এসময় তাদের ১টি আস্তানা ধ্বংস করা হয়। এই অভিযান এখনও চলমান থাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে পর্যটক যাতায়তে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন।
এই ব্যাপারে বান্দরবানের হোটেল মোটেল মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক রাজীব বড়ুয়া বলেন, পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞা থাকা ও সম্প্রতিক ঘটনার কারনে পর্যটন ব্যবসায়িরা বড় ধরণের লোকসান গুনছে।
আর এদিকে একের পর এক বান্দরবানে অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার ও সম্প্রতি র্যাবের উপর হামলার ঘটনায় নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় বান্দরবান জুঁড়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে জেলায় হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটলেও এবার নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় পর্যটক না আসার কারনে জেলার দুই শতাধিক হোটেল-মোটেল ও বিনোদন স্পট গুলো এখন পর্যটক শূন্য, ফলে আর্থিক ভাবে লোকসান গুনছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা, এর এই নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহারের প্রত্যাশা করে হোটেল মোটেল মালিক সমিতির নেতারা।
মৈত্রী/এফকেএ/এএ