বান্দরবানে কলাগাছের আঁশের সুতা দিয়ে পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন

বান্দরবান প্রতিনিধি :

বান্দরবান : জেলা প্রশাসক বান্দরবান পার্বত্য জেলা- এর উদ্যোগে কলাগাছের তন্ত থেকে উৎপাদিত সুতা দিয়ে হস্তশিল্পজাত পণ্য তৈরির এক দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।

১৩ফেব্রুয়ারী সোমবার বান্দরবানের কুহালং ইউনিয়নের ক্রাউ আমতলী পাড়াতে কলাগাছের তন্ত থেকে উৎপাদিত সুতা দিয়ে হস্তশিল্পজাত পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করা হয়।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি এর পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো: ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে একদিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং উদ্ভাবনী প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

কলাগাছের তন্ত থেকে উৎপাদিত সুতা দিয়ে হস্তশিল্পজাত পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসময় বান্দরবান মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া চৌধুরী, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইং সাইং উ নিনি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ জেলা টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর মোঃ আজিজ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ বান্দরবান জেলা পোগ্রাম ম্যানেজার তুলু মারমা’সহ প্রশিক্ষণর্থীগণ
ও পাড়াবাসীগণ উপস্থিত ছিলেন।

বান্দরবান জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো: ফজলুর রহমান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার বিশ্বাস জানান, এই প্রকল্প বান্দরবানে প্রথম, আর এই প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়ের দায়িত্ব নিয়েছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকাবাসী পাহাড়ের পরিত্যক্ত কলা গাছ কেটে এনে মেশিনের মাধ্যমে পিষে নরম করে সুতা বের করে তা পরিষ্কার করে শুকিয়ে বিক্রি করার উপযোগী করে তুলবে আর তাদের কাছ থেকে দেশের নানা প্রান্তে ব্যবসায়ীরা এসে সেই সুতা কিনে নেবেন। পাইলটিং প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বান্দরবানের ক্রাউ আমতলীপাড়া ও খামাদংপাড়াকে। সমীক্ষায় এ গ্রামের পরিবারগুলোর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণের জন্য প্রতিটি পরিবারের গড় মাসিক আয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষাভিত্তিক পরিসংখ্যান, কর্মক্ষম লোকের তথ্য-উপাত্তগুলো নির্ণয় করা হয়।

তন্তু তৈরির প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, আর এ প্রকল্পের জন্য মেশিনসহ সার্বিক অর্থায়নে এগিয়ে আসে বেসরকারি সংস্থা উদ্দীপন, আর তন্তু তৈরির পর বাজারজাতকরণের সব দায়িত্ব নেয় সিএইচপি এবং লার্ক গ্লোবাল। এ সময় সুতা বিক্রি করে বিক্রির টাকা সরাসরি উৎপাদনকারীর বিকাশ অ্যাকাউন্টে চলে আসবে বলে নিশ্চিত করে সবার কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপন এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বান্দরবানের কুহালং ইউনিয়নের ক্রাউ আমতলীপাড়া এবং রাজবিলা ইউনিয়নের খামাদংপাড়ার ৫টি পরিবারের ১০ জনসহ দুইপাড়ার ২০ জন পুরুষ-নারীকে কলাগাছ থেকে সুতা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করার কার্যক্রম শুরু হলো আর এই উদ্ভাবনী প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন হলে বান্দরবানের অন্যান্য পাড়াগুলোতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে আর এতে পাড়াবাসী অনেকটাই লাভবান হবে।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় কলা গাছের প্রাচুর্য রয়েছে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য এনজিওদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় কলা গাছ থেকে ফাইবার তৈরির বিষয়টি আমার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বান্দরবানে পাইলটিং প্রকল্প হিসেবে কলা গাছের তন্তু তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রাম সমীক্ষা শুরু করে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এবং গ্রাউস, প্রাথমিকভাবে ৬৩টি গ্রামের ওপর সমীক্ষা করে এ প্রকল্পের জন্য ৯টি পাড়া ও গ্রামকে নির্বাচন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে । তিনি আরো বলেন, ৫টি কলাগাছ থেকে ১ কেজি সুতা উৎপাদন করা সম্ভব তাছাড়া যেসব পরিবার এ প্রকল্পে সরাসরি জড়িত থাকবে না তারা ও উৎপাদনকারীর কাছে কলাগাছ বিক্রির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হবে, পাশাপাশি বান্দরবানের বিভিন্ন পাড়ার জনসাধারণেরও আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।

মৈত্রী/এফকেএ/এএ

শেয়ার করুন: