‘স্মার্ট এন্ট্রাপ্রেনিউর: স্মার্ট বাংলাদেশ’ সেমিনার অনুষ্ঠিত
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক :
ঢাকা : ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল রূপান্তর অতি আবশ্যক। যার জন্য প্রয়োজন স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট অর্থনীতি। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে উদ্যোক্তাদের ভূমিকা ও করণীয় বিষয়ে ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস (আইডিয়া) ফাউন্ডেশন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ-এর যৌথ আয়োজনে ‘স্মার্ট এন্ট্রাপ্রেনিউর: স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ‘শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২’ তথ্য অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৭ সালে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ, যা এখন কমে ২৬ লাখ ৩০ হাজার জন। বেকারত্বের এ হার মোট শ্রমশক্তির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। কোভিড-১৯ মহামারী এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনীতিতে অস্থিরতা এবং ধীরগতিতে কাজ হারানো মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।
একসময় দেশের বাজেটের ৪০ শতাংশ ছিল বিদেশ নির্ভর, যা বর্তমানে মাত্র ২ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি সম্ভব হয়েছে উদ্যোক্তাদের পরিশ্রমের কারণেই। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরও বেশি তরুণ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব (ফোরআইআর) যুগের এই সময়ে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে এই সংখ্যা কমিয়ে আনা সহজ এবং সম্ভব।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক, সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র সাবেক চেয়ারম্যান এবং আইডিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাজী এম. আমিনুল ইসলাম-এর সভাপতিত্বে সেমিনারের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন, আইডিয়া ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি ও সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক। আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, ডিজিকন টেকনোলজিস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)-এর সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ; লিডিং লাইট ট্রেনিং ইন্সটিটিউট-এর প্রতিষ্ঠাতা সিনথিয়া আক্তার লিজা; এবং আইসিটি বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি’র সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই প্রোগ্রামের পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী। মুক্ত আলোচনা পর্ব পরিচালনা করেন এটুআই-এর হেড অব ই-কমার্স রেজওয়ানুল হক জামী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ। মূল প্রবন্ধের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো, দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার; স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম; ডিজিটাল ফাইনাস্টিয়ার সার্ভিস, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ; চতুর্থ শিল্পবিপ্লব (ফোরআইআর) সম্পর্কে পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে উদ্ভাবন; উদ্যোক্তাদের উৎসাহ প্রদান; এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা।
জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১-এর ভিশন অর্জন করতে স্মার্ট এন্ট্রাপ্রেনিউর অপরিহার্য। প্রয়োজনীয় নীতিমালা পরিবর্তন করে আমরা এন্ট্রাপ্রেনিউরদের জন্য যুগোপোযোগী নীতিমালা তৈরির পরিকল্পনা করছি, কারণ এন্ট্রাপ্রেনিউরাই আগামীতে দেশের উন্নয়নের হাল ধরবে। তরুণ এন্ট্রাপ্রেনিউরদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিতে সরকার রিসার্চ সেন্টার, হাই-টেক পার্ক, ডিজিটাল সেন্টারসহ বিভিন্ন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।”
মো. সামসুল আরেফিন বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট এন্ট্রাপ্রেনিউর বিনির্মাণে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। এন্ট্রাপ্রেনিউর এবং ইনোভেশন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্মার্ট এন্ট্রাপ্রেনিউর তারাই, যারা উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে নিজেকে বিকশিত করে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে পারে।”
মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বদ্ধ পরিকর। কৃষি, স্বাস্থ্য, যাতায়াত, শিক্ষা, শিল্প-বানিজ্যসহ সকল খাতকে উন্নত করে তুলতে দেশব্যাপি স্মার্ট এন্ট্রাপ্রেনিউর গড়ে তুলতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নারী ও তরুণ এন্ট্রাপ্রেনিউর দের যথাযোগ্য সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।”
আনীর চৌধুরী বলেন, “এন্ট্রাপ্রেনিউররা বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। আমরা আইসিটি এক্সপোর্ট নিয়ে কাজ করলে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে প্রায় ১ লক্ষ ডিজিটাল ফার্ম এবং প্রায় ২০ লক্ষ ই-কমার্স এন্ট্রাপ্রেনিউর, এবং ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় ১০ বিলিয়ন ই-কমার্স এন্ট্রাপ্রেনিউর তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে আমাদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”
কাজী এম. আমিনুল ইসলাম বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রয়াস নিয়ে আমাদের এন্ট্রাপ্রেনিউররা সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি মনে করি, একটি দেশ তখনই উন্নত হয়, যখন দেশের সর্বস্তরের মানুষ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। আমি দেশের সকল এন্ট্রাপ্রেনিউরদের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে আমি আহ্বান জানাচ্ছি।”
উল্লেখ্য, ‘ইনোভেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস (আইডিয়া) ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপর ফোকাসসহ উন্নয়ন সহযোগিদের একটি সংস্থা, যারা স্বাধীন গবেষণা, নীতি বিশ্লেষণ, অ্যাডভোকেসি, উপদেষ্টা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে নিযুক্ত। স্মার্ট উদ্যোক্তা, চিকিৎসা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান, কৃষি, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ইত্যাদি নিশ্চিতে সংস্থাটি কাজ করছে।
মৈত্রী/এফকেএ/এএ