বান্দরবানে মডেল মসজিদের ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ধর্ম উপদেষ্টা
মানুষ মসজিদমুখী হলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে
নৈতিকতার বিকাশ,মূল্যবোধ সৃষ্টির ক্ষেত্রে মসজিদগুলো ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সালাত মানুষকে অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। মানুষ যতো মসজিদমুখী হবে সমাজে তত অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে। মডেল মসজিদগুলোতে নামায আদায়ের পাশাপাশি কোরআন প্রশিক্ষন, হেফজখানা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, লাশ ধোয়ার ব্যবস্থাসহ যাবতীয় ইসলামী কার্যক্রম পরিচালনার সুব্যবস্থা থাকবে। বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে ৪৩ শতাংশ জায়গার উপর প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ তলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদটি নির্মিত হবে।
০৫ জুলাই শনিবার বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায় জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ভিত্তি ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
তিনি আরো বলেন, বান্দরবানের প্রবেশমুখে নির্মিত মসজিদ এই পাহাড়ি অঞ্চলের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বহিঃপ্রকাশ এই মডেল মসজিদ। অপূর্ব নির্মাণ শৈলীর এই মসজিদটি পর্যটকদের দৃষ্টিও কাড়বে। আসুন, আমরা মানুষকে ভালোবাসি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এই ভালোবাসা সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক। হিংসা বিদ্বেশ ত্যাগ করে পারস্পরিক ভাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মসজিদ করে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। আপনাদের দায়িত্ব এই মসজিদকে চালু রাখা।

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, বান্দরবানকে অনন্য মর্যাদায় নিয়ে যাবে এই মসজিদ। এই মসজিদ নির্মাণে সর্বস্তরের জনগণের সহায়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। মুসলিম সমাজকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে আপনারার সবাই এক হয়ে কাজ করবেন বলেই আমি আশাবাদী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল হাওলাদার। তিনি বলেন, নামাযের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মানুষকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখা। সুতরাং সমাজকে রক্ষা করতে মসজিদের ভূমিকা অপরিসীম। মুসলিমদের একটি উল্লেখযোগ্য দায়িত্ব হলো অন্যকে সাহায্য করা। অন্যের বিপদে পাশে এগিয়ে আসা ইসলামের শিক্ষা। মানুষের উপকারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। অল্পে সন্তুষ্টিবোধ সৃষ্টি করতে হবে। নিজেকে আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভুলে গেলে মানুষ হওয়া যাবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আব্দুস সালাম খান বলেন, মডেল মসজিদগুলো হলো ইসলামিক গবেষণা ও আলোচনার স্থান। উপদেষ্টা মহোদয় বান্দরবানের মানুষের চাহিদার প্রতি পূর্ণ সমর্থন করে এই জায়গা মসজিদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এই মসজিদ বান্দরবানের ঐতিহ্যের অংশ হতে পারবে বলে আমি আশাবাদী। আমরা আল্লাহর বান্দা। আপনাদের সেবা করতে আমরা খাদেমের ভূমিকায় রয়েছি। উপদেষ্টা মহোদয় প্রধান খাদেম। তাঁর নির্দেশে মডেল মসজিদের কাজগুলো সহজ হয়েছে। আমরা উনার নেতৃত্বে খাদেমের দায়িত্ব শতভাগ পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শহিদুল আলম। তিনি বলেন, অনেকে ধারণা করে থাকেন এই মডেল মসজিদগুলো বিশেষ কোন দেশের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুল। জনগণের টাকাতেই এই মসজিদগুলো নির্মাণ হচ্ছে। মাত্র ৮ হাজার টাকায় এই প্রকল্প শুরু হয়ে বর্তমানে হাজার কোটি টাকায় উন্নতি হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে বান্দরবান জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ পুরোদমে শুরু হবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই। তিনি বলেন, উপদেষ্টা মহোদয়কে আমরা চট্টগ্রামবাসী মনে করার চেয়ে বান্দরবানবাসী হিসেবে বেশি মনে করি। মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে মডেল মসজিদটি মুসলিমদের ভাতৃত্বকে দৃঢ় করবে। মুসলিমরা যে সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে এটাই এক বিস্ময়কর ব্যাপার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বান্দরবান পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার, পিপিএম বলেন, পর্যটন কেন্দ্র মেঘলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ হওয়ার উদ্যোগ এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের আশার প্রতিফলন। উপদেষ্টা মহোদয়সহ যারা এই মসজিদ নির্মাণের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গরা আন্তরিক ছিলেন বলে আজ আমরা মডেল মসজিদের কাজ শুরু করতে পারছি। সবাইকে সম্মান করার ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। মডেল মসজিদটি ইসলামিক সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র হবে। ইসলামিক জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে বিকশিত সমাজ বান্দরবানকে সমৃদ্ধ করবে বলেই আমরা আশাবাদী।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা লে. কর্নেল এস এম আইয়ুব। তিনি বলেন, মসজিদ ভিত্তিক সমাজ নির্মাণের প্রচেষ্টায় আমাদেরকে অগ্রসর হতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে মুসলিমরা এখনো অধিকার বঞ্চিত। মসজিদকে কেন্দ্র করে অধিকার আদায় শুরু হবে। ৩৬ জুলাই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সর্বস্থানে বৈষম্যবিরোধী বান্দরবান প্রতিষ্ঠায় আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করবো। ছাত্র জনতার আন্দোলনে যে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে সে ধরণের স্বৈরাচার বা জুলুমের মনোভাব যেখানেই সৃষ্টি হবে সেখানেই প্রতিরোধের দূর্গ গড়ে তুলতে হবে।
বান্দরবান পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএম মনজুরুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা চারটি উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছি। তিনটি উপজেলায় নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে জমি অধিগ্রহনের মাধ্যমে মসজিদ নির্মান প্রকল্প কাজ শুরু হয়েছে। মডেল মসজিদ পর্যটন কেন্দ্রের গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দিবে। ইসলামী চিন্তাধারার লোকজন অবাধে এই মসজিদে যাতায়াত করতে পারবেন। সম্প্রীতির বান্দরবানের মসজিদ ভিত্তিক কার্যক্রম সমাজ বিনির্মাণে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। সেজন্য মসজিদ নির্মাণের পাশাপাশি মসজিদ পরিচালনার জন্যও প্রকল্প প্রদান করতে আমরা ধর্ম উপদেষ্টার আন্তরিক দৃষ্টি কামনা করি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মো. মজিবর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের মধ্যে সম্মাননা প্রদান করা হয়। কাজী মুজিব বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ধর্ম মন্ত্রণালয় যোগ্য নেতৃত্ব পেলো। বান্দরবানে অন্যান্য ধর্মের স্থাপনা অনেক দুর থেকে দৃশ্যমান হলেও মুসলিমদের নিদর্শন তেমন একটা নেই বললেই চলে। এই মসজিদের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবানেও মুসলিমদের অবস্থা স্বগর্বে জানান দিবে। পাহাড় থেকে অনতিবিলম্বে বৈষম্য দুর করতে হবে। এখনো বাঙ্গালি খুনের রক্তে রঞ্জিত খুনির গাড়িতে জাতীয় পতাকা কেন? পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ থেকে সন্তু লারমাকে বিতাড়িত করতে হবে। আমরা অন্যায় সইবো না। নিজেরাও জুলুম করবো না। মদিনা সনদ অনুসারে সরকার পরিচালিত হোক এই দাবি পাহাড়ি তৌহিদি জনতার। মুসলিমদের একতাতেই পাহাড়ে সাম্যের পতাকা প্রতিষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানে বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, বান্দরবানের বিভিন্ন স্তরের ইসলামী নেতৃবৃন্দ, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব আলাউদ্দিন ইমামী, বাজার মসজিদের খতীব এহছানুল হক, অন্যান্য মসজিদের খতিবগণ, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাগণসহ সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
মৈত্রী/ এএ