বান্দরবানে দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা সমাবেশে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম

মুজিববাদী সংবিধান গোড়া থেকেই একটি ফ্যাসিস্ট সংবিধান ছিল

আলাউদ্দিন আলিফ, দৈ.স.মৈ: বাংলাদেশে বহু জাতিসত্বা রয়েছে। ৭২ এ যে সংবিধান হয়েছে সেখানে সকল জাতি গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এই মুজিববাদী সংবিধান গোড়া থেকেই একটি ফ্যাসিস্ট সংবিধান ছিল। যেটা সমাজ ও রাষ্ট্রে সবসময় বিভাজন তৈরি করে রাখতো। বছরের পর বছর ধরে আমাদের মধ্যে এই বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছে। কখনো মুক্তিযুদ্ধ বনাম রাজাকার, কখনো বাঙালি বনাম পাহাড়ি, কখনো ইসলাম বনাম ধর্ম নিরপেক্ষতা। নানান বাইনারিতে নানান বিভাজনে আমাদের বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই বিভাজন দূর হয়েছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ জায়গায় আসতে পেরেছি। আমাদের ঐক্যের জায়গা ছিল বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে আমরা নতুন করে বিনির্মাণ করবো।

শনিবার রাতে বান্দরবান জেলা শহরের সোনালী ব্যাংকের সামনে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)র উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

তিনি আরো বলেন, নতুন একটা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান। আমরা এখনো লড়াইয়ে আছি। সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি। মানুষের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু যে সিস্টেমে চলতো সেই সিস্টেম এখনো অক্ষত রয়েছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা একটা বাংলাদেশ চাই যে রাষ্ট্রে বহু ভাষা এবং বহু সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটবে। আমরা সকল জাতী গোষ্ঠীর ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বান্দরবানে আসার মাধ্যমে এনসিপি আজ পাহাড়ে নিজেদের কার্যক্রমকে প্রসারিত করেছে। বান্দরবান হবে জাতীয় নাগরিক পার্টির শক্তিশালী ঘাঁটি।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব,আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাহাড়ে যে জাতিগত বিভাজন তৈরি করে রাখা হয়েছে আমরা মনে করি তা ইচ্ছেকৃত এবং পরিকল্পিত। এই বিভাজনের ফলে লুটপাটকারীরা সুযোগ সুবিধা নিয়েছে। আজকে সময় এসেছে আলোচনা, সম্পৃতি এবং সংলাপের মাধ্যমে আমরা সকল বিভাজন ঘুচাবো। নিজেদের অধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করবো।

নতুন সংবিধান এবং বিচারের দাবি করে নাহিদ বলেন, আমরা একটি নতুন সংবিধান এবং অপরাধীদের বিচারের কথা বলছি। যারা গণহত্যা, লুটপাট, অধিকার বঞ্চিত করে রেখেছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা গণ পরিষদ নির্বাচনের কথা বলছি। আমাদের প্রোগ্রাম দেরী হওয়ার কারণ ছিল পথে বাধা প্রদান করা। বাংলাদেশে নতুন করে ভয়ের সংস্কৃতি করা হচ্ছে। সম্প্রতি এবং সংহতির বাংলাদেশ গড়া ছিল আমাদের প্রতিশ্রুতি। মত প্রকাশের স্বাধীনতায় কারো মতের বিরুদ্ধে গেলেও সে তা প্রকাশ করবে। কিন্তু আমরা দেখছি একটি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। আমরা এটার নিন্দা জানিয়ে রাখলাম। কেউ যদি আবার আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দাবিয়ে রাখতে চায় তবে জনগণ আবার মাঠে নামবে।

সংসদে বান্দরবানে সকল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষে প্রতিনিধি থাকবে উল্লেখ করে তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

বান্দরবানে এনসিপির সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ৭২-পরবর্তীতে বিভিন্ন জাতিসত্তাকে স্বীকৃতি না দিয়ে বাঙালি বানানোর অপচেষ্টা ছিল। আমরা চাই সংবিধানে ভাষা, ধর্ম, জাতিসত্তার বৈচিত্র্য থাকুক। বিচার এবং সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা ‘বেটার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলবো। পাহাড়ের মানুষদের আতিথেয়তা আমাকে বরাবর মুগ্ধ করেছে। পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত রুখে দিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বান্দরবানে এনসিপির সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী

এনসিপির মূখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বাংলাদেশে একটি নতুন সংবিধান বানাতে হবে। বান্দরবানের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে সমস্যা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো এতদিন নিজেদের দলের লোকদের সুবিধা দিয়ে ফায়দা লুটেছে। এতে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হয়েছে।

এনসিপির বান্দরবান জেলার প্রধান সমন্বয়কারী মো. শহীদুর রহমান সোহেল বলেন, ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের নায়কদের আগমনে দৃঢ় প্রত্যয়ে বান্দরবানে এনসিপি এগিয়ে যাবে এবং শক্তিশালী হবে।

সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। এসময় এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনীম জারা, সদস্য সচিব আখতার হোসাইন, এনসিপি এর অঞ্চল তত্বাবধায়ক ও যুগ্ন মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ, চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মৈত্রী/ এএ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *