বান্দরবানে ‘বৃক্ষরোপন অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২৫’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস.এম.মনজুরুল হক
গাছ থেকে ফল নিও না এই কথা বৃক্ষ বলে না
আলাউদ্দিন আলিফ, দৈ.স.মৈ: গাছের মতো উপকারী বন্ধু সত্যি আর নেই। বৃক্ষ আমাদের ক্ষতির কারণ হয় না। পরোপকারী বন্ধুর তুলনা করলে গাছের তুলনা শুধু গাছ। গাছ থেকে ফল নিও না, এই কথা বৃক্ষ বলে না।
২৪ জুলাই বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রাঙ্গনে সপ্তাহব্যাপী ‘বৃক্ষরোপন অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২৫’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং পৌর প্রশাসক এস.এম.মনজুরুল হক।
তিনি আরো বলেন, বৃক্ষরোপণ আনন্দের উৎস। আমি নিজেও আমার বাসার ছাদে ফলবাগান করেছি। নিজের রোপণ করা মালটা, বড়ই,তীন ফলের গাছ থেকে ফল খেয়েছি। এটার মতো অনাবিল আনন্দ আর নেই। সবাইকে গাছ রোপণ করার প্রতি উৎসাহ যোগাতে হবে। প্রকৃতি বাঁচলে পৃথিবী বসবাসযোগ্য থাকবে। আমরা নির্মল শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারবো।
শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা,গরম এবং বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে ছাতা বিতরণের কথা উল্লেখ করে এস.এম.মনজুরুল হক বলেন,বান্দরবান পৌরসভার উদ্যোগে আমরা ইতোমধ্যে ১০টি স্কুল, মাদ্রাসাতে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাতা বিতরণ করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরের দিকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সকল শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের মেধা যাচাই করে আকর্ষণীয় পুরষ্কার জিতে নিতে পারবে।
`পরিকল্পিত বনায়ন করি,সবুজ বাংলাদেশ গড়ি ’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বর্ণ্যাঢ্য আয়োজনে শুরু হওয়া বৃক্ষরোপন অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২৫ এ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলার পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে আমি জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করবো। আর পরিদর্শনে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের জন্য গাছ নিয়ে যাবো। আমাদের অক্সিজেন পাওয়ার অন্যতম সহায়ক হলো গাছ। পাশাপাশি আমাদের ত্যাগ করা কার্বন ডাই অক্সাইডগুলোও গাছ গ্রহণ করে। সাধারণ জীবনে বৃক্ষের ভূমিকা অপরিসীম। গাছ রোপণ করে আমরা অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হতে পারি। বনায়ন রক্ষার্থেও গাছ ভূমিকা রাখে। পার্বত্য অঞ্চলে গাছের জীবন প্রবাহ শেষ হলে সেগুলোকে কাঠ হিসেবে ব্যবহার করেও অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখা হয়। শিক্ষার্থীরা নিজেদের বাসার চারিপাশকে বৃক্ষরোপণ করে পাখির কলতানে সুন্দর সকাল দেখতে পারলেই আমাদের বৃক্ষমেলার সফলতা আসবে।
বান্দরবান বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এবার ঔষধী গাছ দেয়া হয়েছে। এই গাছগুলো বাড়ির আঙ্গিনায় চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করবে। ন্যারা পাহাড়ে প্রাকৃতিক গাছ লাগাতে হবে। বাগান কখনো বনের বিকল্প নয়। বন ধ্বংসে দুইটি বড় সমস্যা হয়। বর্ষায় বন্যা এবং সাধারণ মৌসুমে সুপেয় পানির অভাব। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে চাইলে তেঁতুল, হরতকি, সফেদা, টক বড়ই, দেশী গাব এসব গাছ লাগাবেন। প্রতি বছর ২০ লক্ষ তেঁতুল আমদানি করা হয়। সুতরাং তেঁতুলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। শিমুল তুলার গাছ লাগালে সারাদেশে বালিশের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখা যাবে। প্রচুর পাখি আসবে। পাড়াবন ব্যবস্থায় পানির অভাব পূরণ করা যাবে। ৪৫ প্রকার বনজ গাছ ফিরে আসবে। ৬১ প্রকার ঔষধি এবং অন্যান্য প্রজাতীর গাছ ফিরে আসবে। বনরক্ষার জন্য সরকারকে অংশীদারিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পাল্পউড প্লান্টেশন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তহিদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এম.এম. শাহ্ নেয়াজ, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ওয়াহিদুজ্জামান, কারিতাসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ আজিমসহ অন্যান্য অতিথিরা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রেসক্লাব সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, দৈনিক সচিত্র মৈত্রীর সম্পাদক অধ্যাপক মো. ওসমান গণিসহ সরকারি বেসরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২৪জুলাই থেকে ৩০জুলাই সপ্তাহব্যাপী প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বৃক্ষরোপন অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২৫ চলবে। এবারের মেলায় ফলদ, বনজ ও ওষধিসহ বিভিন্ন রকমের চারা নিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক স্টল দর্শনার্থীরা পরিদর্শন করতে পারবে।
মৈত্রী/এএ