টাকা আত্মসাতের অভিযোগ : মেজর (অব.) মান্নানের বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা

ক্রাইম রিপোর্টার,

লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) থেকে প্রতারণার মাধ্যমে দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অবমুক্ত করে ৪৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিআইএফসির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিকল্প ধারার সংসদ সদস্য মেজর (অব.) এমএ মান্নানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-২-এর উপপরিচালক এসএম সাহিদুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।

মামলা দুটির একটিতে (মামলা নম্বর ১০) মেজর (অব.) এমএ মান্নান ছাড়াও ডি’আফরোজ সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম জিলানী দিদার, বিআইএফসির সাবেক এমডি মো. মাহমুদ মালিক, সাবেক এমডি ইনামুর রহমান, সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব বিজনেস সৈয়দ ফকরে ফয়সাল, সাবেক এভিপি অ্যান্ড ইউনিট হেড আহমেদ করিম চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র অফিসার (বিজনেস) মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, সাবেক অফিসার মো. সৈকত আজাদ, সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার তানিজা মাজেদ, সাবেক অফিসার মাসুদ-উল-রেজা চৌধুরী এবং সাবেক সিনিয়র অফিসার ও রিজিওনাল ম্যানেজার আফ্রিদা আহসানকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মেজর (অব.) এমএ মান্নান ও গোলাম জিলানী দিদারকে অবৈধভাবে লাভবান করানো কিংবা নিজেরা লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে অন্য আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে একে অন্যের সহায়তায় বিআইএফসি থেকে ডি’আফরোজ সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজের নামে দুটি ঋণচুক্তির আওতায় বোর্ডসভায় অনুমোদনের অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন করেছেন। গৃহীত ঋণের মধ্যে ২৮ কোটি ৮৪ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৪ টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করেছেন। এজন্য দণ্ডবিধির ৪০৬/৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এ মামলা করা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডি’আফরোজের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে বরাদ্দ অতিরিক্ত টাকার ইস্যুকৃত চেকের অধিকাংশ টাকাই বিআইএফসির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) এমএ মান্নানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন ফার্স্ট লিজিং ইন্টারন্যাশনাল, সানম্যান ইন্ডাস্ট্রিয়াল করপোরেশন, বাংলালায়ন কমিউনিকেশন্স, সানম্যান ফার্মাসিউটিক্যালস, ডিপ সি ট্রলিং কোম্পানি, টাওয়ার বিল্ডার, সানম্যান স্পিনিং মিলস, সিরিনা গার্মেন্টস টেক্সটাইলসের অনুকূলে পরিশোধ করা হয়েছে অর্থাৎ এসব টাকা ডি’আফরোজের অনুকূলে যায়নি।

দুদকের অন্য মামলায়ও (মামলা নম্বর ১১) আসামি হিসেবে রয়েছেন মেজর (অব.) এমএ মান্নান। এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন ক্লিক টু ডিজাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল বাশার, বিআইএফসির সাবেক এমডি মো. মাহমুদ মালিক, সাবেক এমডি ইনামুর রহমান, সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব বিজনেস সৈয়দ ফকরে ফায়সাল, সাবেক এভিপি অ্যান্ড ইউনিট হেড আহমেদ করিম চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র অফিসার (বিজনেস) মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও সাবেক অফিসার মো. সৈকত আজাদ।

ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, মেজর (অব.) এমএ মান্নান ও মো. নাজমুল বাশারদের লাভবান করানোর কিংবা নিজেরা লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে অন্য আসামিরা প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে একে অন্যের সহায়তায় বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি থেকে ক্লিক টু ডিজাইন লিমিটেডের নামে দুটি ঋণচুক্তির আওতায় অবৈধভাবে ঋণ অবমুক্ত করে। এ ঋণের ১৪ কোটি ৩০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দণ্ডবিধির ৪০৬/৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ক্লিক টু ডিজাইনের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে বরাদ্দ অতিরিক্ত টাকার ইস্যুকৃত চেকগুলোর অধিকাংশ অর্থই ক্লিক টু ডিজাইনের পরিবর্তে বিআইএফসির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) এমএ মান্নানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান—সানম্যান ইন্ডাস্ট্রিয়াল করপোরেশন, বাংলালায়ন কমিউনিকেশনস, সানম্যান ফার্মাসিউটিক্যালস ও গোল্ডেন হরাইজনের অনুকূলে সরাসরি গেছে। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলিত টাকার মূল সুবিধাভোগী মেজর (অব.) এমএ মান্নান। তিনি সংশ্লিষ্ট এ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

দুদকের মামলার বিষয়ে মেজর (অব.) এমএ মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মামলার বিষয়টি অবগত নন বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *