ভোটের নতুন তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি
তৌফিক ইমাম / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
সরস্বতী পূজার কারণে দাবির মুখে আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন ভোটের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে দুই দফা বৈঠকে বসেন সিইসির নেতৃত্বে অন্য কমিশনাররা। এর আগে বিকেল ৪টায় নির্বাচন ভবনে বৈঠক শুরু হয়। পরে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর আটটায় দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসে কমিশন।
রাত সাড়ে আটটায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, পরীক্ষার তারিখ পেছালে সমস্যা হবে কিনা। তারা পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সরস্বতী পূজার জন্য ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন পেছানোর দাবিতে আন্দোলন চলছিল। এ নিয়ে করা রিট আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করে দিলে তার আপিলের শুনানিও রয়েছে রোববার।
গত ২২ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য ৩০ জানুয়ারি তারিখ রেখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
কিন্তু একই তারিখ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা থাকায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন তার প্রতিবাদ করে নির্বাচন পেছানোর দাবি তোলে।
কেননা পঞ্জিকা অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯টা ১৫ থেকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ১১টা পর্যন্ত সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। আর ৩০ জানুয়ারি পঞ্চমীর আগে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া যায় না।
তাছাড়া এই পূজা দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকে। আর ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন হলে কয়েক দিন আগে থেকেই ভোটের কার্যক্রম শুরু হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
এমন অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ সিটি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। যদিও সেই রিট খারিজ করে দেন আদালত। তবে খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন ওই আইনজীবী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নির্বাচন পেছাতে একাধিক দিন রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এরপর তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছে।
এত কিছুর পরেও নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ পরিবর্তন না করার পক্ষে অনড় অবস্থান নেয়। এমনকি ভোট এবং পূজা এক সাথে অনুষ্ঠানে কোনো সমস্যা হবে না দাবি করে পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের কোনো সমস্যা নেই।
একই রকমের অবস্থানের কথা জানায় সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে সরস্বতী পূজার দিনে ভোটগ্রহণ না করতে ইসির প্রতি আহ্বান জানান।
আজ শনিবার নির্বাচন পেছানোর দাবিতে নতুন কর্মসূচি হিসেবে ২০ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মানববন্ধন, বিক্ষোভ, গণ-অবস্থান, অবরোধ এবং প্রতীকী অনশনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
এমন প্রেক্ষাপটে শনিবার বিকালে দুই সিটির ভোটগ্রহণের নতুন দিন নির্ধারণে জরুরি বৈঠকে বসে ইসি। সেই বৈঠক শেষেই সরস্বতী পূজার দিনে ভোটগ্রহণ না করার এই সিদ্ধান্তে আসে তারা।