মিথ্যা মামলা দায়ের, সাক্ষ্য ও তথ্য প্রদানের শাস্তি
এ্যাডভকেট ফারহানা / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
মিথ্যা সাক্ষী ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির খবর প্রায় শুনা যায়। এক শ্রেণির মানুষ রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করতে অভ্যস্ত।
আইন যেখানে মানুষকে অপরাধের হাত থেকে রক্ষা করার কথা সেখানে আইনকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে ঘায়েল করা হয়। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে অনেক ক্ষেত্রে মামলার বাদী বা সাক্ষী মহামান্য আদালতে শপথ বাক্য পাঠ করার সময় বলেন “যাহা বলিব সত্য বলিব। সত্য বই মিথ্যা বলিব না।” কিন্তু এই শপথ নিয়ে মিথ্যা জবানবন্দী ও সাক্ষী দেয়। যার ফলে প্রতিপক্ষ চরম হয়রানি ও সর্বস্বান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা সংবাদ বা মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিভ্রান্ত করা কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও হয়রানি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের সুবিচার দেয়ার পাশাপাশি মিথ্যা মামলা বা হয়রানি রোধ করার যথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনে সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী”। আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা আছে বলেই ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির এবং ব্যক্তির সাথে প্রতিষ্ঠানের কোন ঝামেলা হলে বলা হয়, “কোর্টে দেখা হবে”। আইনের চোখ অন্ধ, আইন কার্যকর করতে হলে প্রমাণের প্রয়োজন।
দণ্ডবিধির ১৮২ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে (সরকারি কর্মচারী) মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন পূর্বক রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিভ্রান্ত করে কিংবা কোন সরকারি কর্মচারিকে দিয়ে কারো ক্ষতি বা বিরক্তি উৎপাদন করে, তাহলে সে ব্যক্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় বিধ দন্ডে দণ্ডিত হবেন। কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু না করেও শুধু মিথ্যা খবর পরিবেশন করে পুলিশকে কোন কর্তব্য পালন করা বা করা থেকে বিরত থাকা কিংবা কোন ব্যক্তিকে হয়রানি করা হলেই অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে।
অন্যদিকে, দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুসারে কোন ব্যক্তি যদি কারো বিরুদ্ধে, মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা রুজু করান আর সে মামলা যদি তদন্তে বা বিচারে মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে সেই ব্যক্তির দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম জেল ও জরিমানা কিংবা উভয়বিধ সাজা হতে পারে। কিন্তু যে মিথ্যা অপরাধে তাকে হয়রানি করা হয়েছে তা যদি যাবজ্জীবন কিংবা সাত বছর পর্যন্ত জেলের শাস্তিযোগ্য হয়, তাহলে বাদীর সাত বছর পর্যন্ত জেল কিংবা জরিমানাসহ জেল হতে পারে। ১৮২ ধারা ও ২১১ ধারার মধ্যে পার্থক্য হল, ১৮২ ধারায় মিথ্যা খবর দেয়ার মধ্যে অপরাধটি সীমাবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ পুলিশকে মিথ্যা খবর দিলেই অপরাধটি সংঘটিত হয়ে যাবে। কিন্তু ২১১ ধারায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করার পরে তা তদন্তে বা বিচারে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পরেই অপরাধটি এ ধারায় শাস্তিযোগ্য হবে। আমাদের দণ্ড বিধির ১৮২ ও ২১১ ধারা দুইটি অধর্তব্য। অর্থাৎ ম্যাজিস্ট্রেট এর অনুমতি ছাড়া এ দুই ধারায় মামলা রুজুও হবে না, পুলিশ তা তদন্তও করতে কিংবা আসামী গ্রেফতার করতে পারবে না। ১৮২ ধারার প্রয়োগটি খুবই সীমিত।
দণ্ডবিধির ১৯১ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্য দানের সংজ্ঞা সম্পর্কে বলা আছে, “যদি কোন ব্যক্তি সত্য কথনের জন্য হলফ বা আইনের প্রকাশ্য বিধান বলে আইনত: বাধ্য হয়ে বা কোন বিষয়ে কোন ঘোষণা করার জন্য আইনবলে বাধ্য হয়ে এরূপ কোন বিবৃতি প্রদান করে, যা মিথ্যা এবং যা সে মিথ্যা বলে জানে বা বিশ্বাস করে বা সত্য বলে বিশ্বাস করে না, তা হলে উক্ত ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় বলে পরিগনিত হবে”। কোন বিবৃতি মৌখিক বা অন্য কোন ভাবে দেওয়া হোক না কেন তা এ ধারায় অন্তর্ভুক্ত মিথ্যা সাক্ষ্য দানের জন্য মৃত্যুদণ্ড শাস্তির বিধান। মামলা চলার সময়ে যা করতে হবে যদি মিথ্যা মামলার শিকার হয়েই যান কেউ, তাহলে আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মামলাটি লড়ে যেতে হবে। যদি দলিলপত্র ও সাক্ষ্যপ্রমাণ ঠিক থাকে, তাহলে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই মিলবে। মামলা থেকে পালিয়ে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এতে আপনার অনুপস্থিতিতেই একতরফা সাজা হয়ে যেতে পারে।
তবে ফৌজদারি মামলায় জামিনের বিষয় জড়িত থাকে। জামিন বিষয়ে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। মিথ্যা মামলা হলে রেহাই মিলে। থানায় মামলা হলে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে যথাযথ সত্যতাসহ যাবতীয় দলিল উপস্থাপন করতে হবে।
পুলিশ ইচ্ছে করলে গ্রেপ্তার না করে মামলার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দায়ের করতে পারে। পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দিলে জামিনের আবেদন করতে হবে। পরবর্তী সময়ে অভিযোগ গঠনের দিন মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করতে হবে। নিম্ন আদালতে অব্যাহতি না পেলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেয়ার রিভিশন, কোয়াশমেন্ট ইত্যাদির সুযোগ রয়েছে।
যদি আদালতে সরাসরি মামলা হয়, তাহলেও আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। মামলা সাক্ষ্য পর্যায়ে গেলে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। যদিওঅবশ্যই মামলার অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ যিনি অভিযোগ করেন তাঁর ওপর বর্তায়। অনেক সময় মিথ্যা মামলা হলে মামলাকারী মামলা ঠুকে দেয়ার পর আর হাজির হন না। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি তারিখ যাওয়ার পর মামলা থেকে খালাস পাওয়ার জন্য আবেদন করার সুযোগ আইনে রয়েছে। মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে অবশ্যই মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা আপনি গ্রহণ করতে পারেন। আছে শাস্তির বিধান ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন।
দ-বিধির ১৯১ ও ১৯৬ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তির জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের কথা উল্লেখ আছে। দণ্ডবিধির ১৯৩ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্য দানের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি কোন বিচার বিভাগীয় মোকদ্দমায় কোন পর্যায়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় বা মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি করে তাহলে সেই ব্যক্তির যে কোন বর্ণনার কারাদণ্ড-যার মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে- দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবে, যদি অন্য কোন মামলায় ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে তার শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবে। দণ্ডবিধির ১৯৪ ধারা অনুযায়ী, “যদি কোন ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া বা উদ্ভাবন করা যার উপর ভিত্তি করে নির্দোষ ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে, যে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া যাবে”। দণ্ডবিধির ২০৯ ধারামতে, মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। কোন বিবৃতি মৌখিক বা অন্য কোন ভাবে দেওয়া হোক না কেন তা এ ধারায় অন্তর্ভুক্ত মিথ্যা সাক্ষ্য দানের জন্য মৃত্যুদণ্ড শাস্তির বিধান রয়েছে।
আবার দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় মিথ্যা ফৌজদারি মামলা দায়ের করার শাস্তির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কোনো অভিযোগ দায়ের করলে অথবা কোনো অপরাধ সংঘটিত করেছে মর্মে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে মামলা দায়েরকারীকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করারও বিধান রয়েছে। তবে অভিযোগের বিষয় যদি এমন হয় যে যার কারণে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন বা সাত বছরের ওপর সাজা হওয়ার আশঙ্কা ছিল, তাহলে দায়ী অভিযোগকারীর সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। স্পেশাল আইন ছাড়াও ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০ তে অন্যান্য ক্ষেত্রে মিথ্যা মামলা দায়ের ও সাক্ষ্য প্রদানের জন্য শাস্তির বিধান আছে। বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩)-এর সঙ্গে সবাই কম-বেশি পরিচিত। এই আইনের ১৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতি সাধনের অভিপ্রায়ে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন তবে ওই ব্যক্তির (মিথ্যা মামলা দায়ের প্রমানের সাপেক্ষে) সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। ১৭(২) কোন ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল উপ-ধারা (১) এর অধীন সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করিতে পারবে।
বর্তমানে নারী নির্যাতন মামলা ছাড়াও যৌতুকের মামলা আধিক হারে বেড়েছে। যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ এর মাধ্যমে মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনের ০৬ ধারা মতে যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জানেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ এর ধারা ৩২ এর মতে যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে এই আইনের অধীন আবেদন করার আইনানুগ কারণ নেই জেনেও আবেদন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১ (এক) বছর কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫ এর ২৬ ধারা যদি কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অধীন কোন অপরাধের বিষয়ে কোন মামলা দায়ের করেন এবং যদি তদন্তক্রমে বা সাক্ষ্য প্রমাণে এইটা প্রমাণিত হয় যে, উক্তরূপ অভিযোগটি মিথ্যা বা হয়রানিমূলক, তাহলে উক্ত মামলা টি দায়ের করা অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং যার জন্যে তিনি অনধিক ১ (এক) বছর কারাদণ্ড, তবে ৩ (তিন) মাসের কম না, বা অনধিক ২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদ-, তবে ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকার কম না, বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ সালের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী “ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি, কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষ কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা বা অভিযোগ দায়ের করলে তিনি সর্বোচ্চ ২(দুই) বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ১৩ (২) ধারা আনুযায়ী বলা হয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক, তাহলে মামলা দায়েরকারী ব্যক্তি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২(দুই) বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। শিশু আইন, ২০১৩ এর ৮৩ ধারা মতে কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোন মামলার কার্যক্রমে কোন আদালতে কোন শিশুর সম্পর্কে যদি এমন কোন তথ্য প্রকাশ করেন যা মিথ্যা, বিরক্তিকর বা তুচ্ছ প্রকৃতির তাহলে আদালত প্রয়োজনীয় তদন্ত এবং শো-কজ সাপেক্ষে কারণ লিপিবদ্ধ করে যার বিপক্ষে উক্ত তথ্য প্রদান করা হয়েছে তাকে ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকার ঊর্ধ্বে যেকোন পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীর প্রতি নির্দেশ প্রদান করতে এবং অনাদায়ে অনধিক ৬ (ছয়) মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করতে পারবে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ধারা ২৮ গ (১) এ বলা হয়েছে মিথ্যা জেনে বা তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোন ব্যক্তি ভিত্তিহীন কোন তথ্য প্রদান করে এবং যে তথ্যের বিত্তিতে কোন তদন্ত বা বিচার কার্য পরিচালনার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তিনি মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন বলে গণ্য হবে। (২) কোন ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে তিনি এই উপ-ধারার অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অন্যূন ২ (দুই) বছর বা অনধিক ৫ (পাঁচ) বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। উপ-ধারা (৩) – তথ্য প্রদানকারী কমিশনের বা সরকারি কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী হলে এবং তিনি কোন মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে তার বিরুদ্ধে উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত দণ্ড প্রদান করা হবে। মিথ্যা মামলা বা অভিযোগের মাধ্যমে যদি কোন নিরপরাদ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হয় তবে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি দেওয়ানী বা ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারেন। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও শাস্তি চেয়ে মানহানিরও মামলা দায়ের করতে পারেন।
সার্কেল এএসপি/ জোনাল এসিগণ তাদের অধীক্ষেত্রে রুজুকৃত প্রত্যেকটি মামলারই তদন্ত তদারককারী অফিসার। তাদের মাধ্যমেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই অন্তে আদালতে প্রেরিত হয়। যদি কোন মামলা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়, তবে মামলার বাদীর বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগনামা আদালতে অগ্রগামী করাও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাদের উচিৎ হবে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের প্রস্তুত করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সাথে সাথে মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে বাদীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ নামা গ্রহণ করা এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও বাদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ একই সাথে আদালতে অগ্রগামী করা। অধিকন্তু যে সব বিশেষ আইনের ক্ষেত্রে এমন সুযোগ নেই সেখানে সংশ্লিষ্ট/বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে উৎসাহিত করা ও সহযোগিতা করা। অতএব মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য প্রমাণিত হলে শাস্তির ব্যবস্থা আমাদের আইনে আছে কিন্তু অনেকেই বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পেতে মিথ্যা মামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে চায় না। ফলে মিথ্যা মামলাকারীদের পোয়াভরো হয়েছে।
দেওয়ানী আদালতেও মিথ্যা মামলায় মানহানির ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা দায়ের করা যায়। তাই সকলের মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য পরিহার করা উচিত এবং সব সময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত।