স্থানীয় অভিযোজন প্রসারে চট্টগ্রামে ইয়ুথ ক্লাইমেট হাব’র যাত্রা শুরু
চট্টগ্রাম, প্রতিনিধি :
চট্টগ্রাম : জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় চট্টগ্রামে বিভাগের যুবদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং স্থানীয় অভিযোজনের প্রসারে ইয়ুথ ক্লাইমেট হাবের যাত্রা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী এ হাবের উদ্ধোধন করেন। চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে এ হাব যাত্রা শুরু করে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা, উপকূল এলাকার তরুণ, পাহাড়ের আদিবাসী এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহণ করে তাদের মত ব্যক্ত করেন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংশপ্তকের সহযোগিতায় ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, জলবায়ু সংকট এখন শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি এখন বাঁচা-মরার ইস্যু। এটি শুধুমাত্র পরিবেশগত বা উন্নয়নগত বিষয় নয়। এর মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রতিযোগিতা। মানুষের কারণেই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এজন্য সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে।
বৈঠকের প্রধান অতিথি ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “জলবায়ু পরির্বতনের কারণে বাস্তুচ্যুতদের নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই পুর্ণবাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শহরের বস্তি এলাকায় বসবাসরত দলিত সম্প্রদায়ের মানুষরা মূলত নদী ভাঙনের ফলে আসেন। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদেরও উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় আনতে হবে।”
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সামচ্ছুদ্দিন ইলিয়াস বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর ৩০ হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়ে চট্টগ্রামে আসছেন। কিন্তু তাদের জন্য এ নগরীর কোনো পরিকল্পনা নেই। তাদের মৌলিক অধিকারের বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ” আইসিসির প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রের পানির উচ্চতা ২ মিটার বৃদ্ধি পাবে। এমন চলতে থাকলে ২১৫০ সালে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা ৫ মিটার পর্যন্ত। বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে চট্টগ্রাম শহরের অন্তত ৬৯ শতাংশ এলাকা সমুদ্রপৃষ্টের ৪.৫ মিটার নিচে তলিয়ে যাবে। এজন্য এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।”
চট্টগ্রাম শহরও জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিন শহরের প্রায় ১৮ শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে যায়। কিন্তু নগরীতে জলবায়ু বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কোনো টেকসই পরিকল্পনা নেই।” চট্টগ্রামের ইয়ুথ ক্লাইমেট হাব গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশের মানুষ এখনো জলবায়ু সুবিচার নিয়ে সচেতন নন। যারা কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী, তাদের থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে।”
তরুণ পরিবেশকর্মী ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, ” জলবায়ু পরিবর্তন স্বাভাবিক বিষয় হলেও উন্নত রাষ্ট্রগুলোর কারণে আজ তা সংকটে রুপ নিয়েছে। জলবায়ু সংকট এখন বৈশ্বিক সমস্যা। মূলত পুঁজিবাদ, উপনিবেশবাদ, এবং প্রাণ-প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্যের উপর মানুষের একচ্ছত্র আধিপত্য এ সংকটের প্রধান কারণ। জলবায়ু সুবিচার নিয়ে এখনো দেশের মানুষ সচেতন নন। এ বিষয়ে দেশ থেকে আওয়াজ তুলতে হবে। এ আওয়াজ আন্তর্জাতিক মহলে নিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু সংকটের প্রভাব মোকাবিলায় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
চট্টগ্রাম ইয়ুথ ক্লাইমেট হাবের আহ্বায়ক প্রকৌশলী সনাতন চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিদ্যুৎ কান্তি নাথ, সংশপ্তকের প্রধান নির্বাহী লিটন চৌধুরী, উপকূল সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা জোবায়ের ফারুক, যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা সাঈদুল আরেফিন প্রমুখ।
মৈত্রী/এফকেএ/এএ