দেশব্যাপী কোরবানির পশু কেনাবেচায় ডিজিটাল হাট-২০২২ এর উদ্বোধন

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক

ঢাকা : আসন্ন ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে কোরবানির পশু কেনাবেচায় জনসমাগম ও ভোগান্তি কমাতে বিগত দু’বছরের ন্যায় এবারও অনলাইন ‘ডিজিটাল হাট-২০২২’ (digitalhaat.gov.bd) প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে রবিবার এটুআই-এর একশপ ও ই-ক্যাব-এর আয়োজনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সহযোগিতায় অনলাইনে আয়োজিত ডিজিটাল হাট-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব শ ম রেজাউল করিম, এমপি। অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থেকে দেশব্যাপী এই ডিজিটাল হাট প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব শ ম রেজাউল করিম, এমপি বলেন, ডিজিটাল ব্যবস্থা নিয়ে একসময় যারা হাসাহাসি করতো তারাও এখন জিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিচ্ছে। এখন আমাদের এই ডিজিটাল ব্যবস্থাকে টেকসই করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এবার দেশে ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে এবার কোরবানিযোগ্য এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৮৮৯টি পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, কোরবানির পশু ব্যবস্থাপনা নিয়ে একসময় নানা বিড়ম্বনা ও প্রতিকূল পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকায়নের মাধ্যমে সে পরিস্থিতি অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। আমাদের চালু করা অনলাইনে ডিজিটাল হাট থেকে পশু ক্রয়ের পর যদি কারো মনোপুত না হয়, সেক্ষেত্রেও তার প্রতিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর্থিক লেনদেনের জন্য স্মার্ট কার্ডসহ অন্যান্য অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। অনলাইনে গবাদিপশু ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যাতে কেউ প্রতারণার শিকার না হন সেটি দৃষ্টি দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন মাননীয় মন্ত্রী। ডিজিটাল হাটের সাথে সম্পৃক্ত সকলকে সম্মিলিতভাবে সেটি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান, যাতে অনলাইনে কেনাকাটার করার বিষয়ে মানুষের আস্থা বাড়ে।

মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি, বলেন, সরকারের ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ ও অন্যান্য ডিজিটাল সেবার মান উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়েছে। লেনদেনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত করতে ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করার জন্য চারটি ডিজিটাল প্রযুক্তি উন্নয়ন করা হয়েছে। এসব প্রযুক্তিগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা ও আস্থা আরও বাড়বে। এছাড়া ‘হার পাওয়ার’ নামের একটি প্রকল্পের আওতায় ই-কমার্স উদ্যোক্তা বিশেষ করে ২৫,০০০ নারী ই-কমার্স উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশব্যাপী গত দু’বছরের ডিজিটাল হাট যে সাড়া ফেলেছে তারই ধারাবাহিকতায় এবছর সরকারি প্ল্যাটফর্ম (gov.bd) এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং একে বছরব্যাপী পশু ক্রয় বিক্রয়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তৈরি করা হবে।

ডিজিটাল হাট-২০২২ উদ্বোধন শেষে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ডিজিটাল হাট থেকে একটি কোরবানির গরু ক্রয় করেন। পরে গরুটি সিলেটের বন্যা কবলিত এলাকার দুস্থ মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য ই-ক্যাব পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ‘মানবসেবা’-তে দান করেন।

উল্লেখ্য, ঈদ-উল-আযহাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দেশে এক কোটিরও বেশি কোরবানির পশু কেনাবেচা হয়ে থাকে। জনসমাগম ও ভোগান্তি কমাতে ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো অনলাইনে ‘ডিজিটাল পশুর হাট’ (digitalhaat.net) প্ল্যাটফর্মে কোরবানির পশু কেনাবেচা শুরু হয়। এই হাটের মাধ্যমে ২০২০ সালে ২৭ হাজার এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার পশু বিক্রি হয়। নাগরিকদের ঘরে বসে নিজেদের পছন্দের কোরবানির পশু কেনার সুযোগ করে দিতে এবছর আরও বৃহৎ পরিসরে digitalhaat.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একার্যক্রম গ্রহণ হয়েছে। ডিজিটাল হাটে গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, উট ও মহিষ ক্যাটাগরিতে দেশের ৯৫০টিরও অধিক হাটকে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন এলাকার ৭০টি পশু খামারকে যুক্ত করা হয়েছে। বিগত বছরের ন্যায় এবারও ডিজিটাল হাটে পশু কেনাবেচায় কোনো অনিয়ম বা প্রতারণার শিকার হলে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে ও ক্রেতা-বিক্রেতার লেনদেনকে নির্বিঘ্ন করতে এস্ক্রো পেমেন্ট সিকিউরিটি চালু রাখা হয়েছে।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের অতিরিক্ত সচিব (মহাপরিচালক) জনাব মোঃ হাফিজুর রহমান, এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মোহাম্মদ মাহে আলম, ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি-২) পরিচালক ড. এএনএম গোলাম মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি জনাব মোহাম্মদ ইমরান হোসেন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের স্বপ্ন এবং উইং প্রকল্পের ন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার জনাব কাজল চ্যাটার্জী, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক জনাব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বক্তব্য প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার এবং ডিজিটাল হাট ২০২২ প্ল্যাটফর্মের বিস্তারিত উপস্থাপন করেন এটুআই-এর হেড অব ই-কমার্স জনাব রেজওয়ানুল হক জামি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এটুআই-এর ন্যাশনাল কনসালটেন্ট জনাব শাহরিয়ার হাসান।

ডিজিটাল হাট ২০২২-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি), বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন, আইসিটি বিভাগ, এটুআই, একশপ, ও ই-ক্যাব-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মৈত্রী/এফকেএ/এএ

শেয়ার করুন: