বান্দরবানে মেডিকেল কলেজের উদ্যোগে নতুন সম্ভাবনা, স্বাস্থ্য খাতে বাড়ছে জনবল
বান্দরবানে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। তিনি বলেন, “চলতি বছরের এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এই অবকাঠামোকে মেডিকেল কলেজ হিসেবে রূপান্তর করলে জেলার স্বাস্থ্য খাতে তা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হবে।”
বুধবার (৪ জুন) বান্দরবান মেডিক্যাল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএসএ) আয়োজিত সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত বিনামূল্যে চিকিৎসা শিবিরে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সম্মান জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বলেন, “স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। এই সেবায় নিয়োজিতদের আন্তরিকতার কোনো বিকল্প নেই। আমরা এখনও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পারিনি। দক্ষ জনবল, আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে জেলা পরিষদ আন্তরিকভাবে কাজ করছে এবং শিগগিরই নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।”
সদর ছাড়াও রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় নিয়মিত স্বাস্থ্য ক্যাম্প চালুর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বান্দরবানের সন্তানরা যখন নিজ এলাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে এগিয়ে আসে, তখন আমরা গর্বিত হই। মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে জেলার পাশাপাশি প্রত্যন্ত এলাকাতেও নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে। মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা বান্দরবানের সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবি।”
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই বলেন, “সকাল পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করলেও বিকালে অনেক চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বার অনুশীলনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এতে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। প্রত্যেক চিকিৎসককে পেশার প্রতি আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হতে হবে। শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী হোক কিংবা সাধারণ পেশাজীবী—সবারই নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “জেলা পরিষদ একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। আমরা চাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হোক। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও মানবিক জেলা পরিষদ গড়তে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। মেডিকেল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে সুধী সমাজের অনুপ্রেরণা ও অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মেহেদি হাসান। তিনি বলেন, “চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত স্বেচ্ছাসেবী অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। চিকিৎসা ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেক সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে পারছেন না। বিনামূল্যে চিকিৎসা শিবিরের মাধ্যমে তারা নিজেরা সচেতন হয়েছেন, প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই সনদ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একটি মেডিকেল কলেজ এখন বান্দরবানের সর্বস্তরের মানুষের দাবি। জেলা পরিষদ এই দাবির বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএমএসএর সাধারণ সম্পাদক উনু মং মারমা। তিনি বলেন, “মেডিকেল শিক্ষার্থীরা অতীতের মতো ভবিষ্যতেও বান্দরবানে চিকিৎসাসেবা দিতে আগ্রহী। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সহযোগিতা ছাড়া আমাদের কার্যক্রম সম্ভব হতো না। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বান্দরবান নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ রাশেদা খানম, বান্দরবান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দি এবং বিএমএসএর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি বেনাজীর জাহাঙ্গীর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের লিঙ্ক:
মৈত্রী/এএ