শহীদুল আল জাজিরায় সাক্ষাৎকারের জন্য গ্রেফতার হননি: গওহর রিজভী
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম আলজাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারের কারণে গ্রেপ্তার হননি, বরং সন্ত্রাসকে উস্কে দেয়ার মতো অপপ্রচারের কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। এ সময় তিনি জানান, শহিদুল আলম তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গ্রেপ্তারের পর তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন গওহর রিজভী। তিনি সংবাদমাধ্যমটির ‘হেড টু হেড’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানটি আজ গভীর রাতে প্রচারের কথা রয়েছে। তবে এর আগে অনুষ্ঠানটির প্রায় দুই মিনিটের একটি প্রমো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়েছে আলজাজিরা।
গত বছরের আগস্ট মাসের শুরুতে বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহতের পর নজিরবিহীন আন্দোলন গড়ে ওঠে। প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সরকারের সমালোচনা করেন শহিদুল আলম। এছাড়া কয়েকবার ফেসবুক লাইভেও আসেন।
৫ আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার নামে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়। মামলায় তার বিরুদ্ধে ফেসবুক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় তিনি ১০৭ দিন কারাভোগ করেন।
আলজাজিরার অনুষ্ঠানের প্রমোতে দেখা যায়, শহিদুল আলম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়েন গওহর রিজভী। উপস্থিত দর্শকদের হাস্যরসের শিকারও হন তিনি। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি বলেন, ‘আল জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্যে শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মিথ্যা তথ্য প্রচারের অভিযোগে। তার প্রচারিত তথ্যগুলো সন্ত্রাসকে উসকে দিচ্ছিল। ’
গ্রেপ্তারের পর শহিদুলকে মারধর করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে গওহর রিজভী কিছুটা বিব্রতবোধ করেন। তিনি বলেন, ‘যখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তখন তার চিকিৎসার ব্যাপারে আমি নিজে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তার যাতে সুচিকিৎসা হয়, তার পরিবার যাতে তার জন্যে খাবার নিয়ে যেতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্যে আমি উদ্যোগ নিয়েছিলাম।’
এ সময় আলজাজিরা গওহর রিজভীর কাছে জানতে চান, আপনার বন্ধু কী মানসিকভাবে অসুস্থ? উত্তরে তিনি বলেন, না। এ সময় উপস্থাপক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, শহিদুল মানসিকভাবে অসুস্থ। তখন রিজভী বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না প্রধানমন্ত্রীর মনে কী ছিল। তবে কেউ যদি মিথ্যা তথ্য প্রচার করে আর সেই তথ্য সন্ত্রাসকে উসকে দেয়, জীবনকে বিপন্ন করে তোলে…।’
এ সময় গওহর রিজভী বলেন, ‘আমি যা বলেছি, আমি আমৃত্যু সেই একই কথা বলবো, তা হলো বাকস্বাধীনতা না থাকলে আমাদের সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে। একই সঙ্গে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে নাগরিকদের রক্ষা করার।’
গওহর রিজভীর সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হবে আজ (১ মার্চ) বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় (জিএমটি ২০:০০)। অনুষ্ঠানটি পুনঃপ্রচার করা হবে ২ মার্চ (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায়, জিএমটি ১২:০০), ৩ মার্চ (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায়, জিএমটি ০১:০০) এবং ৪ মার্চ (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায়, জিএমটি ০৬:০০)।