এজেন্ডা ২০৩০ এর বাস্তবায়নে অটিজম ব্যক্তিবর্গকে সম্পৃক্ত রাখতে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার,

ঢাকা, লিগ্যাল ডেস্ক : জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এজেন্ডা ২০৩০ এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অটিজম এবং অন্যান্য নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে আরও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০১৯ উপলক্ষে বাংলাদেশ ও কাতার মিশনের যৌথ উদ্যোগে এবং অটিজম স্পীকস্ এর সহযোগিতায় ৩ এপ্রিল জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘অটিজম : প্রতিপালন সেবা কাঠামো এবং পরিবার কেন্দ্রিক যন্ত’ শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে সূচনা বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এই আহ্বান জানান।
ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, বেলারুশ, ওমান, ইতালী এবং দক্ষিণ কোরিয়া ছিল ইভেন্টটির সহযোগী দেশ।

বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ‘শুভেচ্ছা দূত’ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের একটি উদ্বৃতি উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা তাদের (অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের) বিভিন্ন কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকর উপসর্গের প্রশমন করতে চাই, কিন্তু আমরা তাদের বিশেষ মানব বৈচিত্রের পরিবর্তন ঘটানোর কোনো প্রয়োজন দেখি না। আমরা তাদেরকে সফল, সুখী ও উৎপাদনশীল করে গড়ে তুলতে চাই”।

অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে আক্রান্তদের সঠিকভাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদানে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন গৃহীত পরিবার-কেন্দ্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গিসমূহের কথাও উল্লেখ করেন স্থায়ী প্রতিনিধি।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট অর্জনসমূহের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমাদের অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটিতে সকল অংশীজনদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। আমরা প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এবং নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট অ্যাক্ট ২০১৩ প্রণয়ন করেছি।
আমাদের সরকার ‘উদ্ভাবনীর সংস্কৃতি’কে এবং অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের সেবাদানকারীদের প্রযুক্তিগত সহায়তা গ্রহণকে উৎসাহিত করছে। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি প্রতিবন্ধী সংশ্লিষ্ট ই-সেবা এবং ওয়েভ ও আইসিটি ভিত্তিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নব অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ইন্টারনেট, স্মার্ট ফোন অ্যাপস্ ও অন্যান্য আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা আজ অনেক কিছু করছে”।

ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পীচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, কাউন্সিলিং সার্ভিস, বিনামূল্যে সহায়ক যন্ত্রের বিতরণ, মোবাইল থেরাপি সার্ভিসসহ নানাবিধ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে বাংলাদেশের সময়োপযোগী ও সফল পদক্ষেপসমূহের কথাও উল্লেখ করেন স্থায়ী প্রতিনিধি।
অটিজম সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ সংক্ষেপে তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অটিজম রিসোর্স সেন্টারসমূহ অটিজম আক্রান্ত শিশুদের বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করছে, যেমন- সনাক্তকরণ, মূল্যায়ন, থেরাপি, কাউন্সেলিং এবং রেফারেল সার্ভিস।

প্রতিবন্ধীত্ব প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচি, অগ্রাধিকার ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা, নার্সিং ও কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহের সেবা, সরকারি হাসপাতালে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, শ্রবণশক্তি বিষয়ক অঙ্গসমূহের প্রতিস্থাপন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি এবং কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তাসহ কর্মপরিবেশ সৃজনের মতো বাংলাদেশের উত্তম অনুশীলনগুলোর কথা তুলে ধরেন স্থায়ী প্রতিনিধি।
বেলারুশের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্ড্রি ড্যাপকিউনাস ইভেন্টটির উদ্বোধনীতে অংশ নেন।

ইভেন্টটির দ্বিতীয় পর্বে একটি ইন্টারেক্টিভ প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, এতে মডারেটর ছিলেন ড. এন্ডি সিহ।
প্যানেলিস্টগণ অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেতৃত্বশীল ভূমিকা ও গৃহীত পদক্ষেপসমূহের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *