প্যারোল নয়, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাই: রিজভী
তৌফিক ইমাম,
ঢাকা, লিগ্যাল ভয়েস : কাককবিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে সরকারের ঘুম হারাম হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘চিকিৎসা ও জামিনে বাধা প্রদানের পেছনে সরকারের নীলনক্সা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন দেশনেত্রীকে হয় দুনিয়া থেকে, না হয় রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে। গত কয়েকদিন ধরে সরকার দলীয় লোকদের মিডিয়া এবং মন্ত্রী ও তাদের নেতাদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। দেশনেত্রীর চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান কামালের বক্তব্য এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সাহেবের বক্তব্য বিপরীতধর্মী। এতে বোঝা যায় তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা নিয়ে নিষ্ঠুর তামাশা করছেন।’
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পিজি হাসপাতালে তার চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা নেই।ডাক্তারদের দিয়ে গঠিত বোর্ড তার রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় কোনো অগ্রগতি নেই। তারাও স্বীকার করছেন দেশনেত্রীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
আমরা জেনেছি, তিনি একেবারেই হাঁটাচলা করতে পারছেন না। ডায়াবেটিস, জটিল অন্যান্য রোগ ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বেগম খালেদা জিয়া এখন গুরুতর অসুস্থ। সরকার তার বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করার জন্য সময়ক্ষেপণ করছে কি না এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন হচ্ছে। তবে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্ষতিকর কিছু হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই-নিঃশর্তভাবে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। তাকে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দি রাখা হয়েছে। জামিন পাওয়া তার নাগরিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। যে মিথ্যা মামলায় তাকে জোর করে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেই মামলায় অন্যান্য ব্যক্তিরা সবাই জামিনে রয়েছেন। আদালতের ওপর প্রভাব খাটিয়ে শুধু দেশনেত্রীকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। নতুন নতুন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া হচ্ছে। আসলে মামলা কিছু নয়, উদ্দেশ্য দেশনেত্রীকে তিলেতিলে শেষ করা অথবা চিরজীবনের জন্য রাজনীতির ময়দান থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং তাদের উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পর্যন্ত বন্দি করে রাখা। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী থেকে শুরু করে তাদের প্রিয়ভাজন ব্যক্তিরা একই ধরনের মামলায় জামিনে আছেন।’
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ‘সরকারকে বলবো-এক মাঘে শীত যায় না। পরিস্থিতি সব সময় এক থাকে না। নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভাবুন। সময় বদলাতে তো সময় লাগে না। মানুষের আওয়াজ শুনুন। পায়ে পা মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে জনতা। ফুঁসছে মানুষ। জনতার আদালত তৈরি হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘আগের রাতে অন্ধকারের ভোটে ক্ষমতায় চেপে বসা অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা বলতে বলতে সত্য বলা ভুলে গেছেন। মুখস্ত করা কবিতার মতো অবলীলায় তিনি গড়গড় করে মিথ্যা বলতে পারেন। গত ৫ এপ্রিল গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-‘বিএনপি থেকে চিৎকার করা হচ্ছে, তাদের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। অথচ বিএনপির কারও বিরুদ্ধে একটিও মিথ্যা মামলা করা হয়নি।’ প্রধানমন্ত্রীর একথাটি শুনে একটি প্রবাদ মনে পড়ে যায়-অল্পশোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর। তার এই পর্বতসমান মিথ্যা বক্তব্যে দেশের মানুষ পাথর হয়ে গেছে। এতো মিথ্যা কিভাবে মানুষ বলতে পারে তা রীতিমত বিস্ময়কর-অকল্পনীয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে ১ লাখের বেশি মিথ্যা মামলায় আসামি ২৫ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে ২৫ হাজার গায়েবী মামলা। ঘটনার দিন-তারিখ-স্থান যাই হোক, বিবরণ প্রায় একই। পুলিশের ওপর হামলা, ককটেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর, নাশকতার পরিকল্পনা, গোপন বৈঠক ইত্যাদি। এই অভিযোগগুলো অভিযোগ খাতায় থানা-পুলিশ আগেই প্রেস থেকে ছাপিয়ে রেখেছে, নেতাকর্মী ধরার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে নাম বসিয়ে দেওয়া। প্রধানমন্ত্রীর পুলিশ লাশের নামে, পঙ্গু, প্রবাসী, অন্ধ, প্যারালাইজড্ রোগী এবং হজব্রত পালনে মক্কায় অবস্থানরত ব্যক্তিসহ কারাবন্দীদের নামে এসব গায়েবী মামলায় আসামি করেছে। সারা দেশের মানুষ জানে মামলাগুলো সত্য নয়, মিথ্যা-আজগুবে-ভূতুড়ে। তিনি যা বলেন তার উল্টোটা সত্য বলে মনে করে মানুষ। ক্ষমতায় থাকার জন্য মিথ্যা, উড়ো-অবান্তর বক্তব্য দিয়ে মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করার ক্ষমতা এই সরকারের শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীই শেখ হাসিনার টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন।’
আরও পড়ুন: বিজেপির ইশতেহারে ফের রামমন্দির
সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, অধ্যাপিকা সাহিদা রফিক, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান, কৃষক দলের ভিপি ইব্রাহিম, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।