বাড়িতে টাকা জমান জাপানি কেতায়

জামিলুর রহমান,

লিগ্যাল ভয়েস : খারাপ দিনের জন্য কিছু সঞ্চয় করুন- এ উপদেশ কমবেশি সবাই শুনেছেন। তবে সব সময়ে হয়তো গুরুত্ব দেওয়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু অর্থ সঞ্চয় করা ভালো। তাতে ব্যয়ের বিষয়ে খানিকটা নিশ্চিন্ত থাকা যায়।

আর জেনে অবাক হবেন- এশিয়া হচ্ছে একমাত্র মহাদেশ, যেখানে ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ কিছু না কিছু অর্থ সঞ্চয়ের জন্য আলাদা করে রাখেন। এ তথ্য প্রখ্যাত নিয়েলসন ইন্সটিটিউটের। তারা বলছে, এশিয়ার বিপরীতে আমেরিকার মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ অর্থ সঞ্চয় করে। সঞ্চয়ের উদ্বৃত্ত করতে এশিয়ায় এমন একটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, যা দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন পাশ্চাত্যের মানুষ। এমনই এক জাপানি পদ্ধতি ‘কাকিবো’। এটি হলো অর্থ সঞ্চয়ের জন্য ১১৫ বছর পুরনো একটি জাপানি কৌশল।

কাকিবো পদ্ধতিতে বেশ কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। তবে সে জন্য অবশ্য খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। শুধু একটি খাতা আর একটি পেন্সিল থাকলেই চলবে। গবেষখরা বলছেন, এই জাপানি পদ্ধতি যে কোনও মানুষকে তাদের আয়ের ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

জাপানি শব্দ ‘কাকিবো’ মানে হলো ‘বাসার অর্থকড়ির হিসাবের বই’। এই বিষয়টির ওপর জাপানের একজন লেখক ফুমিকো চাইবা বলছেন, ১৯০৪ সালের দিকে এই পদ্ধতির সূচনা হয়েছিল।এই পদ্ধতিটি তৈরি করেন জাপানের প্রথম নারী সাংবাদিক হানি মোতোকো। তিনি এমন একটি কৌশল আবিষ্কার করতে চেয়েছিলেন, যার ফলে জাপানের নারীরা তাদের পরিবারের অর্থকড়ি ভালোভাবে সামলাতে পারবেন।

ওই সময় বেশিরভাগ নারীকেই বাসার বাইরে কাজ করতে দেওয়া হতো না এবং তারা শুধু পরিবারের খরচ হিসাবে স্বামীর দেওয়া অর্থ থেকে যে টুকু সম্ভব বাঁচিয়ে সঞ্চয় করতে পারতেন।

তিনি বলেন, ‘জাপানে অনেক দিক থেকেই ঐতিহ্যবাহী কিছু সংস্কৃতি অনুসরণ করা হয়, তবে কাকিবো যেন নারীদের স্বাধীনতার একটি উপায়ও তৈরি করেছিল।’

প্রথম দিকে কাকিবোর বিষয়টি একটু কঠিন মনে হতে পারে- তবে সেটাই এই পদ্ধতির সাফল্যের চাবিকাঠি। প্রথমত, আপনাকে প্রতিদিনের বা সাপ্তাহিক আয় ও ব্যয়ের বিষয়টি কয়েকটি ভাগে লিখতে হবে। যেমন আয়, নিয়মিত খরচ (ভাড়া, পরিবহন, খাবার, ওষুধ), অবসরের খরচ এবং অতিরিক্ত ইত্যাদি।

আপনি যতগুলো ইচ্ছা ক্যাটাগরি তৈরি করতে পারেন। অনেকে যেমন খাবার খরচটি নানাভাবে তালিকাভুক্ত করেন এবং তাদের নানা রঙে লিখে থাকে, যাতে সেগুলো সহজে নজরে পড়ে। মাস শেষে আপনি মোট আয় থেকে এ সব খরচ বাদ দেবেন। কিন্তু প্রক্রিয়াটি এখানেই শেষ হচ্ছে না। কাকিবো শুধু খরচ নিয়ন্ত্রণই করছে না, বরং শেখাবে কিভাবে নিজের অর্থকড়ির সঠিক নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

জাপানি এই কৌশলের পেছনে আসল উদ্দেশ্য হলো, যে সব ব্যয় বাদ দেওয়ার উপায় নেই, সেগুলোকে শনাক্ত করে অপ্রয়োজনীয় খরচগুলো এড়িয়ে চলা। প্রতি মাসের শুরুতে আপনি একবার কাকিবো নিয়ে বসবেন এবং মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করবেন যে আপনি কতটা সঞ্চয় করতে চান। সঞ্চয়ের লক্ষ্যপূরণের জন্য আপনাকে হয়তো চারটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে।

* আপনি এখন পর্যন্ত কতটা সঞ্চয় করতে পেরেছেন?

* আপনি আসলে কতটা সঞ্চয় করতে চান?

* আপনি কত টাকা খরচ করতে যাচ্ছেন?

* আগের মাসের তুলনায় সঞ্চয় বাড়াতে এই মাসে আর কী করা যেতে পারে?

এ সব উদ্দেশ্য পূরণের জন্য পরামর্শটি খুবই সাধারণ- কাকিবো পদ্ধতি আপনার আয় এবং ব্যয়ের একটি পরিষ্কার চিত্র পেতে সহায়তা করে। সুতরাং আপনিও একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *