৯০০ কর্মী, অথচ অফিস নেই যে প্রতিষ্ঠানের
এম মোমেন,
লিগ্যাল ভয়েস ডেস্ক : অফিস সংস্কৃতি বাদ দেয়ার একটা রেওয়াজ ধীরে ধীরে চালু হতে যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে এটা কর্মীদের জন্য ভালো হবে নাকি মন্দ? বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন এক প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে, যার কর্মী বাহিনী নয় শতাধিক। কিন্তু প্রথাগত কোনো অফিস ব্যবহার করছেন না তারা।
‘অটোমেটিক’ নামে ওই বহুজাতিক কোম্পানির কর্মী ক্যাট হিউস্টন বলেন, মেধা সমভাবে ভাগ করা থাকলেও প্রায়ই সমান সুযোগ সবার থাকে না। আমরা যেভাবে কাজ করি, এ প্রক্রিয়ায় সুযোগবঞ্চিত মেধাবীরাও সুযোগ পান।
হিউস্টনের মতো অটোমেটিকের ৯৩০ কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাজ করছেন। বিবিসি ফাইভ লাইভের ওয়েক আপ টু মানি প্রোগ্রামে তিনি বলেন, এটা আমাদের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে এবং কেউ এখন অফিসের নাম মুখেই আনেন না। আমি অফিসমুক্ত। আমরা আমাদের স্বাধীনতা উপভোগ করছি এবং একে অন্যের সঙ্গে দেখা করতে ভ্রমণটা উপভোগ করছি।
দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ, বার্তা সরবরাহের সহজ পথ, ভিডিও অ্যাপগুলো এবং সহযোগিতামূলক ও মনিটরিং করার মতো অ্যাপগুলো কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্য অফিস রাখা অপ্রয়োজনীয় করে দিয়েছে। তার বদলে প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন অবস্থান থেকে কর্মী সংগ্রহ করছে, যারা নিজের বাসা বা ভাগাভাগি করা স্পেস থেকে কাজ চালাচ্ছে।
৭০টিরও বেশি দেশ থেকে অটোমেটিকের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় কোনো কার্যালয় না রেখে বছরের বিভিন্ন সময় নিয়মিত সাক্ষাতের জন্য কর্মীদের বিমান টিকিট সরবরাহ করা হয়। একই সঙ্গে বাসাকে কর্মোপযোগী করে তুলতে প্রয়োজনীয় সহায়তা করে অটোমেটিক। এমনকি কেউ যদি কোনো কফি হাউজ থেকে কাজ করেন, তাহলে তাকে পানীয় গ্রহণের জন্য অর্থ দেয়া হয়। এগুলো আসলে একটা অফিস রাখার চেয়ে সাশ্রয়ী।
হিউস্টন বলেন, অফিস না রাখায় অনেক ব্যয় সাশ্রয় হয়। লন্ডন, সান ফ্রান্সিসকো ও নিউইয়র্কের মতো শহরগুলোয় অফিস ভাড়া অনেক বেশি।
অফিস না থাকায় যে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নিজেদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ করেন না বিষয়টা এমন নয়। হিউস্টন বলেন, নিয়মিত সাক্ষাতের মাধ্যমে আমরা ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির যোগাযোগের গুরুত্বকেও মূল্য দিই। বার্ষিক একটি অনুষ্ঠানে কোম্পানির সব কর্মী সমবেত হন। এছাড়া বিভিন্ন টিম বছরে অন্তত দুবার করে নিজেদের সঙ্গে মিলিত হয়। একসঙ্গে মিলিত হওয়ার পেছনে বিমানভাড়ায় খরচ করা হয়। আমার টিম এ বছরের শুরুতে থাইল্যান্ডে মিলিত হয়েছে।
দূর থেকে কাজ করার বিষয়টি এখন জনপ্রিয় ট্রেন্ড (প্রবণতা) হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাজ্যের পরিসংখ্যান দপ্তর অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস লেবার ফোর্স সার্ভের বরাতে জানা গেছে, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ ঘরে থেকে তাদের প্রধান কাজ করছে, যা ১০ বছর আগে ছিল ৮ লাখ ৮৪ হাজার।
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য প্রধান কার্যালয় লাগবে, এ বিষয়টি এখন অনেক কোম্পানিই উড়িয়ে দিচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অব অ্যাক্সেটর বিজনেসের অর্গানাইজেশন বিহেভারের অধ্যাপক আইকে ইনসেওগলু বলেন, এটা বেশ জনপ্রিয় প্রবণতা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। স্টার্ট আপগুলোর জন্য এটি বেশ ব্যয় সাশ্রয়ী ও আকর্ষণীয় হিসেবে দেখা যাচ্ছে। কর্মীদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে এটা বিশাল সুবিধা, কারণ আপনাকে যাতায়াত করতে হচ্ছে না।
ঘরে বসে কাজ করার কিছু অসুবিধার কথাও বলেছেন অধ্যাপক ইনসেওগলু। আপনার অফিস সময় কতটুকু, কোন সময়টা আপনার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সময়, এ বিষয়গুলো নির্ধারণ করা কঠিন ঠেকে। বাসায় কাজ করার আরো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য সংকট।
বাসায় কাজ করার সময় ব্যক্তি নিজেকে একাকী ও বিচ্ছিন্ন মনে করতে পারে। তবে ইন্টারনেট সংযোগের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করা কর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংযোগ অনুভব করতে পারেন, যা একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্ন হওয়ার অনুভূতি থেকে রক্ষা করতে পারে বলে মনে করেন তিনি। সূত্র: বিবিসি


 
							 
							