রাজধানীতে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪০৩ জন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত

লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের আগের রেকর্ড ভেঙেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, গতকাল সোমবার রাজধানীতে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪০৩ জন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, বিগত ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক ডেঙ্গুতে আক্রান্তের রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বেসরকারি হিসাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রুগীর সংখ্যা এর চেয়েও তিন-চার গুণ বেশি।

গতকাল ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহাদৎ হোসেন হাজরা। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা জানান, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়ে যায়। জ্বর হলে ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামল ও তরলজাতীয় খাবার খাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন, বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, ডেঙ্গু কোনো মারাত্মক রোগ নয় এবং এতে চিন্তার কিছু নেই। এই রোগ নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। প্রয়োজন সতর্ক ও সচেতন থাকা। রক্তের প্লাটিলেট কমে গেলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ডাক্তারদেরও সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রেশার কমে যাচ্ছে কি না নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। যাদের একাধিকবার ডেঙ্গু জ্বর হয়, তাদের ক্ষেত্রে একটু ঝুঁকি থাকে। তবে সুষ্ঠু ব্যবস্থপনায় ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়ে যায়।

ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, যে কোনো জ্বরে আক্রান্ত রোগী যত বেশি বিশ্রামে থাকবে, যত বেশি তরল খাবার খাবে, তত দ্রুত জ্বর নিয়ন্ত্রণে আসবে। তাই ডেঙ্গুর মূল চিকিত্সা প্রচুর তরল বা পানি গ্রহণ করা, পর্যাপ্ত বিশ্রামে থাকা ইত্যাদি।

যে কোনো জ্বরে ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপর তাপমাত্রা গেলেই তা কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে। প্রচুর পানি, শরবত ও তরল খাবার বেশি দিতে হবে। কোনো অবস্থায়ই শরীরে যেন তরলের ঘাটতি না হয়।

জ্বর হলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাবেন না। অন্যান্য ওষুধ প্রয়োগ না করাই উচিত। তবে যে কোনো জ্বর তিন দিনের বেশি থাকলে, শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, তাই এতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ সেবন করা যাবে না। কেননা, হেমোরেজিক ডেঙ্গু হলে কিছু ব্যথার ওষুধ রক্তক্ষরণ বাড়িয়ে বিপদ ঘটাতে পারে। তীব্র জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর কমে যাওয়ার পরের কিছুদিনকে বলা হয় ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড। এ সময়টায় সবার সচেতন থাকা খুব জরুরি।

ডেঙ্গুর চিকিত্সা বাড়িতেও সম্ভব, তবে বেশি দুর্বল ও পানিশূন্য হয়ে পড়লে বা শরীরের কোথাও রক্তবিন্দুর মতো দাগ, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, নাক বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার মতো যে কোনো লক্ষণে দেরি না করে হাসপাতালে নিতে হবে।

গত ৯ জুলাই হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করলেও বেশ কিছুদিন ধরেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শাহাদত্ হোসেন হাজরা। রবিবার সকালের দিকে কার্যালয়ে এসে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাসিক সমন্বয় সভায়ও অংশ নেন। এ সময় অসুস্থ বোধ করলে ডা. শাহাদত্ সিলেট বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাকে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রবিবার বিকাল ৪টার দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে কর্তব্যরত চিকিত্সকরা ডা. শাহাদেক ঢাকায় পাঠান।

রাত সোয়া ১০টার দিকে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া জানান, হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান ডা. শাহাদাত হোসেন। যেহেতু মৃত অবস্থায় এসেছেন এবং তার শুধু জ্বরের হিস্ট্রি ছিল, তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে মৃত্যুর কারণ বলা কঠিন।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শাহাদত হোসেন হাজরার কী কারণে মৃত্যু হয়েছে তা তদন্ত করতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইইডিসিআর) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। ডেঙ্গুর বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। গতকাল রাজধানীতে ৪০৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। অতীতে কখনো এক দিনে এতসংখ্যক আক্রান্ত হয়নি। তবে ডেঙ্গুর চিকিত্সার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চিকিৎসকদের দেওয়া আছে। এ ব্যাপারে আরো বেশি সচেতন হতে সব বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

আগামীকাল বুধবার সব হাসপাতালের পরিচালক ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে।

এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাও কম নয়। ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৬১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিত্সাধীন। এর মধ্যে ১০ জন আইসিইউতে ভর্তি। এদের অবস্থা আশঙ্কজনক। ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো তারা কিছু বলতে পারে না। তাদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *