‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ, জাতির পিতার বাংলাদেশ’

সোনালি আঁশ পাটের সাথে বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিজড়িত। পরিবেশবান্ধব ফসল হিসেবে পাটের গুরুত্ব বিবেচনায় পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি, দেশিয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাট ও পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সোনালি আঁশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তুলে ধরার লক্ষ্যে প্রতিবছর ৬ মার্চ ‘জাতীয় পাট দিবস’ উদযাপন করা হচ্ছে। আগামী ০৬ মার্চ ২০১৯ তারিখ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক তৃতীয়বারের মত ‘জাতীয় পাট দিবস-২০১৯’ উদযাপন করা হবে।

২। বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে পাটখাতের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের প্রায় ৪ কোটি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের উপর নির্ভরশীল। পাটখাতের উন্নয়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাট শিল্পের পুনরুজ্জীবন ও আধুনিকায়নের ধারা বেগবান করার লক্ষ্যে ‘পাট আইন,২০১৭’, ‘জাতীয় পাটনীতি-২০১৮’ ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন,২০১০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ সকল আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যে ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধির পেয়েছে। পাট পণ্যের প্রসার ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পাটচাষী, পাটপণ্যের উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী, বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্যোক্তা, পাটজাত পণ্যের ব্যবহারকারীগণ, ব্যবসায়ী সংগঠন, স্হানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, স্হানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজনকে সম্পৃক্ত করে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে আগামী ০৬ মার্চ ‘জাতীয় পাট দিবস’ দেশব্যাপী উদযাপন করা হবে। এবারের জাতীয় পাট দিবসের শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘সোনালি আশেঁর সোনার দেশ, জাতির পিতার বাংলাদেশ’

৩। আগামী ৬ মার্চ, ২০১৯ তারিখ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি), ঢাকায় পাট দিবসের মূল অনুষ্ঠান এবং ৬-৭ মার্চ দুই দিনব্যাপী পাটপণ্য মেলা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা , প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উক্ত অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণার সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।

৪। জাতীয় পাট দিবস-২০১৯ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়কদ্বীপে পাট ও পাটজাত পণ্যদ্বারা বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হচ্ছে। প্রচারণার জন্য ব্যাপক পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার ও বিলবোর্ড স্থাপন করা হচ্ছে। পাট দিবসের গুরুত্ব এবং পাট সংক্রান্ত বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১. সেরা পাটচাষী; ২. সেরা পাটবীজ উৎপাদনকারী; ৩.কাঁচাপাট রপ্তানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান; ৪.পাটপণ্য উৎপাদনকারী সেরা পাটকল (সরকারি); ৫.পাটপণ্য উৎপাদনকারী সেরা পাটকল (বেসরকারি) ৬.সরকারি পাটকলে সর্বোচ্চ পাট সরবরাহকারী; ৭.পাটপণ্য রপ্তানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান (বেসরকারি); ৮.বহুমুখী পাটপণ্য রপ্তানিকারক সেরা পাটকল(বেসরকারি); ৯. বহুমুখী পাটপণ্য রপ্তানিকারক সেরা উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান; ১০.বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনকারী সেরা উদ্যোক্তা (মহিলা) ১১. বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনকারী সেরা উদ্যোক্তা(পুরুষ); ১২.পাটসুতা রপ্তানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান (বেসরকারি); ১৩. সর্বোচ্চ পাটপণ্য রপ্তানিকারক (ট্রেডার্স); ১৪. পাট শিল্পের উন্নয়ন গবেষণা ও শিক্ষাসহ ১৪টি ক্যাটাগরিতে ১৮ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার প্রদান করা হবে ।

৫। জাতীয় পাট দিবস-২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে মাননীয় স্পীকার, মন্ত্রিপরিষদের মাননীয় সদস্যগণ, সম্মানিত সংসদ সদস্যগণ, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ, বাংলাদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনের প্রধানগণ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

৬। পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৮ এর নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালে উন্নয়ন জংশন, ২০৪১ সালে উন্নত দেশ জাতীর পিতার সোনার বাংলা, ২০৭১ সালে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ, ২১০০ সালে ডেল্টা প্লান (নিরাপদ ব-দ্বীপ) ঘোষণা করা হয়েছে। এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সার্বিক পাটখাত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মানব সম্পদ উন্নয়নে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমুহে বিজ্ঞান অনুষদে ‘পাট বিষয়ক’ একটি করে স্বয়ংসম্পূর্ণ বিভাগ চালুকরণ এবং পাট ও পাটবীজ চাষ সম্প্রসারণ এবং নতুন নতুন বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্ভাবন, সম্প্রসারণ, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা ও উচ্চতর ডিগ্রি (এমফিল/পিএইচডি) প্রদানের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মন্ঞ্জুরি কমিশনকে পত্র মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছি। এছাড়া পাটের বৈচিত্রময় ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাট পণ্য গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপনের বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় আছে।

৭ । পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন,২০১০ এর অধীন ১৯টি পণ্যের মোড়কীকরণে পাট পণ্যের বাধ্যতামূলক ব্যবহার দেশের অভ্যন্তরে ১৫০ কোটি পাটের বস্তার চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। পাট চাষীদের উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি পাট শিল্পের সম্প্রসারণ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছানোর কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, পাট ক্রয়-বিক্রয় সহজিকরণের জন্য এসএমএস ভিত্তিক পাট ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাকরণ, কাঁচা পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ, পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রনোদনা ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধিকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী গত পাট উৎপাদন মৌসুমে রেকর্ড পরিমান ৯১.৯৯ লক্ষ বেল কাঁচাপাট উৎপাদন হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৩-১৪ পাট উৎপাদন মৌসুমে পাট উৎপাদনের পরিমান ছিল মাত্র ৬৭.৮৫ লক্ষ বেল।

৮। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণ ও উচ্চমূল্য সংযোজিত পাটপণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে -পাট থেকে অমিত সম্ভাবনাময় ভিসকস, চারকোল, কম্পোজিট জুট টেক্সটাইল, পাট পাতার পানীয় উৎপাদন, নদীর পাড় সংরক্ষণ ও ভাঙ্গনরোধে পরিবেশবান্ধব জুট জিও-টেক্সটাইল, পলিথিনের বিকল্প ‘সোনালি ব্যাগ’ উৎপাদনের মাধ্যমে পাটখাতে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত করেছে। ৫০দশকে স্থাপিত পুরাতন মেশিনসমূহের উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৫০% কমে গেছে যা বিজেএমসি’র লোকসানের একটি বড় কারণ। বিজেএমসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাটা এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় – ‘বিজেএমসির আওতাধীন ০৩টি মিল সুষমকরণ, আধুনিকায়ন, পুনর্বাসন এবং বর্ধিতকরণ প্রকল্প’, ‘শেখ হাসিনা স্পেশালাইজড জুট টেক্সটাইল মিল প্রকল্প’, এবং ‘করিম জুট মিলস্ লিমিটেড ও দৌলতপুর জুট মিলস্ লিমিটেড এ ফেল্ট কারখানা স্থাপন’ এবং ‘কেএফডি মিলস্ লিমিটেড এর বহুমুখী ইউনিটের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

০৯। পাট অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘উচ্চ ফলনশীল (উফশী) পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং উন্নত পাট পঁচন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ২ লক্ষ ৫০ হাজার পাটচাষিকে বিনামূল্যে উফশী পাটবীজ, সার, বালাইনাশক ও কৃষিযন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়েছে এব্ং পাট চাষের উন্নত কলাকৌশল সম্পর্কে ১ লক্ষ ১১ হাজার পাটচাষিকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। পাটবীজের আমদানি নির্ভরতা হ্রাসকরণের ৬২১২ মে.টন পাটবীজ উৎপাদন করা হয়েছে। প্রকল্পটি জুন, ২০১৭ খ্রি. তারিখে সমাপ্ত হলে পাটচাষিদের সহযোগিতা অব্যহত রাখার লক্ষ্যে জুলাই,২০১৮ হতে মার্চ,২০২৩ মেয়াদে ‘উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি দেশের ৪৬টি জেলার ২৩০ টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে পাটবীজের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করে চাষিদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা এবং পাট চাষে চাষীদের সহযোগিতা প্রদানের নিমিত্ত ৭ লক্ষ ৬৫ হাজার চাষিকে বিনামূল্যে উফশীবীজ, সার, বালাইনাশক এবং কৃষিযন্ত্রপাতি বিতরণ করা হবে। এছাড়া প্রকল্পভুক্ত ৪ লক্ষ ২০ হাজার পাটচাষিকে পাটচাষের উন্নত কলাকৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। আধুনিক প্রযুক্তি এবং উচ্চফলনশীল পাটবীজ ব্যবহার করে পাটের একর প্রতি ফলন বৃদ্ধি পাবে।

১০। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এর মাধ্যমে পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ ও ব্যবহারের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্যোক্তাগণ দৃষ্টিনন্দন পাটপণ্য উৎপাদন করছেন যার অধিকাংশই বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। বহুমুখী পাটজাত পণ্যকে দেশে জনপ্রিয় করতে প্রচার প্রচারণাসহ বিভিন্ন মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। পাটজাত পণ্যের উদ্যোক্তাগণ এ পর্যন্ত ২৮০ রকমের বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন করেছেন যা পাটজাত পণ্যের মেলায় প্রদর্শনের পাশাপাশি বিক্রয়ের ব্যবস্থা থাকছে। পাটপণ্যে ব্যপক প্রসারের লক্ষ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে আরও ‘প্রদর্শনী কেন্দ্র’ স্থাপনের বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় আছে।

১১। জাতীয় পাট দিবস ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের এ মেলা পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী, বিপণনকারী, ব্যবহারকারী এবং দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে অধিক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক হবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করছি। গৃহীত উদ্যোগসমূহ যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাটকে আমরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারবো। ফলে ঐতিহ্যবাহী এই সোনালী আঁশ আমাদের সমৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।

১২। তৃতীয়বারের মতো সমগ্রদেশে ‘জাতীয় পাট দিবস-২০১৯’ এর সফল উদযাপন এবং এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ০২(দুই) দিনব্যাপী বহুমুখী পাটজাত পণ্যের মেলার ব্যাপক প্রচার প্রচারণায় আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *