জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণার দাবী সালমান এফ রহমানের
সংসদ প্রতিবেদক,
সংবিধান সংশোধন করে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত, শিল্পোন্নয়ন ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। জাতীয় সংসদে গতকাল রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ দাবি উত্থাপন করেন তিনি।
সংসদে সালমান এফ রহমান বলেন, এই একটি মাত্র স্লোগানে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। অথচ জাতীয় পার্টি, বিএনপি এমনকি সরকারি কর্মকর্তারাও জয় বাংলা বলেন না। কেন? এটি দলীয় স্লোগান নয়; জাতীয় স্লোগান। সংবিধান সংশোধন করে জয় বাংলা স্লোগানকে জাতীয় স্লোগানের স্বীকৃতি দেয়া হোক।
জাতীয় সংসদে গতকাল প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, সাবেক মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল, আবদুল মান্নান, চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক), বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিরোধী দলবিহীন বাংলাদেশ কেউ চায় না। বিএনপির ভুল রাজনীতির কারণে তাদের আজকের এ অবস্থা। পাপ করেছে, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে। হত্যার রাজনীতি ও দুঃশাসনের কারণে তারা এখন ফলভোগ করছে। নির্বাচন মীমাংসিত বিষয়, এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। এটা নিয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই। সুলতান মনসুর সংসদে এসেছেন। বিএনপির যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারাও সংসদে আসুন। ভুল রাজনীতি আর করবেন না। বিরোধী দলশূন্য সংসদ আমরা চাই না। আর ভোট বর্জনকারীদের জনগণ কোনোদিন গ্রহণ করে না।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, সংবিধানকে পদদলিত করে জেনারেল জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার বন্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছে। এটা জেনারেল জিয়ার অমার্জনীয় অপরাধ। জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে খালেদা জিয়াও বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশিদকে বিরোধী দলের নেতা বানিয়েছেন। খুনিরাই এসব করতে পারে। এ কারণে খালেদা জিয়ার বিচার হওয়া উচিত। জঙ্গিবাদের উত্থান, অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে শত শত মানুষ খুনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াই হত্যার রাজনীতি চালু করেছিলেন। আর তারেক জিয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যাসহ পুরো আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপি-জামায়াতের রেখে যাওয়া অকার্যকর দেশকে শেখ হাসিনা ১০ বছরে একটি সম্ভাবনাময় দেশে উন্নীত করেছেন। চারদিকে শুধু সফলতা আর সফলতা। বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাসের নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শক্ত হাতে তা দমন করতে পেরেছিলেন বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নে পুরো বিশ্বে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমন করেছি। অনেক মা-বাবা জঙ্গিদের মরদেহ পর্যন্ত নিতে চাননি। জলদস্যু ও বনদস্যুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে অভিযান চলছে।
জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু স্পষ্টত স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কীভাবে যুদ্ধ করতে হবে, কীভাবে জয়ী হতে হবে, সেটিও তিনি বলে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের কোনো মানুষ এখন না খেয়ে থাকে না। ১০ লাখ রোহিঙ্গার মুখেও খাদ্য তুলে দিচ্ছে বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে, মহাকাশে নিজ স্যাটেলাইট। এ অগ্রগতি কেউ রুখতে পারবে না। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও প্রয়োজন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ায় আমাদের দায়দায়িত্ব বেড়েছে। প্রার্থী নন, মূলত গত ১০ বছরের উন্নয়ন-অগ্রগতি-সমৃদ্ধির রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হয়েছেন। দেশের জনগণ তার পক্ষে নৌকা মার্কায় গণরায় দিয়েছে। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, মহাজোটগত নির্বাচন করলেও আমরা বিরোধী দলের আসনে বসেছি, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। ব্যক্তিগত গালাগালি, ফাইল ছোড়াছুড়ি, অসংসদীয় কদর্য শব্দ ব্যবহার করে সংসদ বর্জন করে কি আমাদের বিরোধী দল প্রমাণ করতে হবে? নিজস্ব অর্থায়নে সরকার পদ্মা সেতু করছে, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করছে, ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে সরকার, এর বিরোধিতা আমরা কী করে করব? সরকারের মন্দ কাজের অবশ্যই বিরোধিতা করব।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, দেশের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে উন্নয়ন হয়নি। এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। আর এ চলমান উন্নয়ন-সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় যারা শামিল হবেন না, তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। গর্বিত জাতি হিসেবে আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সময়। তাই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-মাদক নির্মূলসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের আরো অধিক মনোযোগী হতে হবে।