পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ফেনীর ৬৮ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার
ফেনী প্রতিনিধি,
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ফেনীর ৬৮ হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কোনোটিরই নেই সুষ্ঠু মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বেশ কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হলেও হাসপাতালগুলো আগের মতোই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ফেনী জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে ৩৫টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ৪৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি হাসপাতাল ও ১২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছাড়পত্র আছে।
অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন-২০১০ অনুযায়ী, কোনো বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিবন্ধিত হওয়ার আগেই পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক।
ফেনীর হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তালিকা অনুযায়ী, জেলার ৮৩টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র আছে ফেনী কনসেপ্ট হাসপাতাল, মিশন হাসপাতাল ও দাগনভূঞা ইউনিক হাসপাতালের। আর ছাড়পত্র নেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে রয়েছে ভাইটাল রিসার্চ, ফেনী ক্লিনিক, ইবনে সিনা, প্যাসিফিক, ডক্টরস পয়েন্ট, শেভরন ক্লিনিক, কমপ্যাক্ট হেলথ কেয়ার, ডক্টরস ক্লিনিক, আল্ট্রাপ্যাথ, ছাগলনাইয়া নিউ মডার্ন ডিজিটাল ল্যাব, দাগনভূঞা পদ্মা ডিজিটাল ল্যাব, সোনাগাজী ক্লিনিকসহ ১২টি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে রক্ত, পুঁজ, সংক্রমিত স্যালাইন সেট, ডায়রিয়া সংক্রমিত রোগীর কাপড়চোপড়, সংক্রমিত সিরিঞ্জ ইত্যাদি বর্জ্য হয়। এছাড়া আছে অ্যানাটমিক্যাল বর্জ্য যেমন— মানবদেহের কেটে ফেলা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, টিস্যু, গর্ভফুল ইত্যাদি। আর তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে রেডিওঅ্যাকটিভ আইসোটোপ, অব্যবহূত এক্স-রে মেশিন হেড ইত্যাদি। কিন্তু ফেনীর কোনো হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই নেই নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ফলে যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে এসব মেডিকেল বর্জ্য।
ফেনী জেলা প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ জানান, বর্তমানে ক্লিনিক্যাল বর্জ্যগুলো ফেনী পৌরসভার মাধ্যমে একটি এনজিওর দায়িত্বে অপসারণ করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেনী পৌরসভার সীমানার মধ্যে ২৪টি হাসপাতাল ও ২৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সার্ভ বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পৌরসভার সহযোগিতায় এ ৫০টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য অপসারণের কাজ করছে। তবে জেলায় পৌরসভার বাইরে রয়েছে ৩৩টি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর ফেনী জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক ফাইজুল কবির জানান, ছাড়পত্র পেতে প্রায় ৪২টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা রয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে নানা ত্রুটি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে না পারায় এসব প্রতিষ্ঠানকে ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে না।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. রুবাইয়াত বিন করিম বলেন, ছাড়পত্র খতিয়ে দেখার জন্য সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল রয়েছে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে নতুন করে নিবন্ধন পেতে অনলাইনে আবেদনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ৩১ জুন পর্যন্ত এর মেয়াদ রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন, জেলার প্রায় সব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করেছে। দুয়েক মাসে মধ্যে সব প্রতিষ্ঠানই ছাড়পত্র পাবে বলে আশা করছেন তিনি।