বহুপাক্ষিকতাবাদ সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চাবিকাঠি: মোমেন

লিগ্যাল ভয়েস : জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, “বহুপাক্ষিকতাবাদ সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চাবিকাঠি। একক কোনো দেশের সরকারের পক্ষে এর নিরাপত্তা বিধানও সম্ভব নয়।

আমাদের একমাত্র প্রত্যাশার জায়গা হচ্ছে বহুপাক্ষিকতাবাদের মাধ্যমে উন্মুক্ত, নিরাপদ, স্থিতিশীল, প্রবেশযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ তথ্য-প্রযুক্তি পরিবেশ সৃষ্টি করা” ২৫ এপ্রিল সিঙ্গাপুর মিশন এবং জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘সাইবার নিরাপত্তা ও সক্ষমতা বিনির্মাণ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।

শক্তিশালী বৈশ্বিক সাইবার নিরাপত্তা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রদূত মাসুদ কয়েকটি সুপারিশের কথাও তুলে ধরেন। এগুলো হল: ১. সরকারি বিশেষজ্ঞ দল এবং ওপেন এন্ডেড ওয়ার্কিং গ্রুপের প্লাটফর্মকে পূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে সাইবার জগতে বিধি-বিধান নিশ্চিতের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ তার ভূমিকা অব্যাহত রাখা যাতে সাইবার পথের ভবিষ্যৎ নিয়ম নীতি, অংশীজনদের মধ্যে আস্থাবৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা পদক্ষেপ বিনির্মাণের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত হয়। ২. আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত সাইবার জগৎ নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করা। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে রাষ্ট্রদূত মাসুদ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৭৩তম সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের সপ্তাহে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাংলাদেশ আয়োজিত সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সাইবার নিরাপত্তা সংস্কৃতি’কে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের অবারিত সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি এবং জাতিসংঘের আহ্বানে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠানের যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা স্মরণ করেন। ৩. বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত আচরণ বিধিমালার অনুপস্থিতে জাতিসংঘ সনদের মূলনীতি এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইনসমূহ সাইবার জগৎ পরিচালনায় কাজে লাগানো। ৪. সাইবার আক্রমণ প্রতিহত করা, সচেতনতা সৃষ্টি, নির্ভরযোগ্য পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা সৃষ্টি, সরকারসমূহ এবং প্রধান প্রধান বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের সক্ষমতা বিনির্মাণ,

৫. গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোতে সাইবার আক্রমন ও সাইবার সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করা, সাইবার জগতের চৌর্যবৃত্তি রোধ এবং এতদসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও উপাত্ত বিনিময়ের ক্ষেত্রে দেশসমূহের সর্বোত্তম অনুশীলন পরস্পর ভাগ করে নেওয়া। ৬. সাইবার বিষয়গুলোকে আমলে নিতে দেশসমূহের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে গৃহীত বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন প্রচেষ্টাসমূহের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কথা উল্লেখ করে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। গত এক দশকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিপুল বিনিয়োগ আমাদেরকে বিশাল সফলতা এনে দিয়েছে। আমরা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে আমাদের জনগণের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছি। ই-গভর্ননেন্স ও ই-কমার্স এর সুবিধা ব্যবহার করে আমরা পন্য ও সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে”।

আইসিটি খাতে বাংলাদেশের কষ্টার্জিত অর্জনগুলোকে সুরক্ষিত করতে সরকার যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশ গৃহীত ‘নিরাপদ আইসিটি ইকোসিস্টেম ব্যবস্থা’, ‘আর্থিক খাতে সাইবার বিপর্যয় মোকাবিলা করার সামর্থ্য বিনির্মাণ’ এবং প্রশাসন, আইন ও ব্যবসা খাতে সাইবার নিরাপত্তার সংস্কৃতি সমুন্নত রাখার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা কৌশল, জাতীয় আইসিটি পলিসি, তথ্য নিরাপত্তা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এর কথাও উল্লেখ করেন স্থায়ী প্রতিনিধি। রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন সক্ষমতা বিনির্মাণের জন্য ২০২১ সালের মধ্যে নূন্যপক্ষে এক হাজার সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সৃষ্টির পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরি ও কম্পিউটার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম প্রতিষ্ঠাসহ সাইবার সিকিউরিটির ক্ষেত্রে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন স্থায়ী প্রতিনিধি।

জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও উচ্চ প্রতিনিধি মিজ ইজুমি নাকামিটসু এবং সিঙ্গাপুরের সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সীর প্রধান নির্বাহী ডেভিড কোহ্ সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তাগণ এ সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভাটি পরিচালনা করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের স্থায়ী প্রতিনিধি বুরহান গফুর।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *