বস্ত্র পোশাক খাতে ৬০ হাজার কোটি টাকা ভর্তকি দরকার
স্টাফ রিপোর্টার,
লিগ্যাল ভয়েস : পোশাক খাতে শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে না পেরে গত মাসে ২২টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। চাকরি হারিয়েছেন ১০ হাজার ৬৮৫ জন শ্রমিক। ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলোকেই বেশি সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হলেও মূল্য সংযোজন হচ্ছে না। অর্থাৎ বিক্রি বাড়লেও মুনাফা কম আসছে। এ সংকট মোকাবেলায় আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি চেয়েছে বস্ত্র ও পোশাক খাতের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ এবং রফতানিকারকদের সংগঠন ইএবি।
রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে গতকাল বস্ত্র, পোশাকসহ রফতানি খাতের চারটি সংগঠন ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিতভাবে পাঁচ বছরের জন্য ৫ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনার দাবিসহ আরো বেশকিছু দাবি প্রস্তাব আকারে উপস্থাপন করা হয়। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ড. রুবানা হকসহ উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিকেএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট মনসুর আহমেদ এবং ইএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম।
পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, পোশাক খাতের ব্যবসায় তিনটি সংগঠনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
বর্তমানে পোশাক রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও মূল্য সংযোজন হচ্ছে না। অর্থাৎ বিক্রি বাড়লেও মুনাফা কম আসছে। এ সংকট কাটাতে হলে আসন্ন বাজেটে আমাদের প্রণোদনা প্রয়োজন। তাই আমরা চার সংগঠন সম্মিলিতভাবে বাজেটে সরকারের কাছে প্রণোদনা হিসেবে রফতানি মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভর্তুকি চাই। এতে আগামী অর্থবছরে সরকারের অতিরিক্ত ১১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। আগামী পাঁচ বছর এ সহায়তা দরকার। এতে পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। যেখানে সরকার ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট দিচ্ছে, সেখানে এ বরাদ্দের পরিমাণ কম।
তিনি আরো বলেন, যেসব ছোট ও মাঝারি কারখানা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারছে না এবং বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে, সেসব কারখানার নিরাপদ এক্সিটের জন্য ৩০০ কোটি টাকার একটি ইমার্জেন্সি তহবিল গঠন করা প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের রফতানি বাড়ছে। কিন্তু এ বাজারে জিএসপি সুবিধা না থাকা এবং রফতানি বাড়াতে আমাদের সরকারের নীতিসহায়তা দিতে হবে।
বর্তমানে পোশাক খাত ৪ শতাংশ নগদ সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু এ সহায়তা পেতে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চারটি সংগঠনেরই নেতারা।
যেসব কারখানা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি নয়, তাদের উৎপাদনকাজে ফিরে যাওয়া এবং ব্যবসা সচল রাখার জন্য ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের মেয়াদ দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়ে ড. রুবানা হক বলেন, সব পোশাক কারখানার জন্য ব্যাংকের সুদহার এক অংকের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং অনতিবিলম্বে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। সংগঠনগুলোর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রফতানি বাজারে টিকে থাকার জন্য প্রতিযোগী মুদ্রার সঙ্গে পাল্লা দিতে আমাদের মুদ্রার মান মার্কেট মেকানিজমের ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া যৌক্তিক।
রফতানি খাতগুলোর জন্য ডলারপ্রতি অতিরিক্ত ৫ টাকা বিনিময় হার প্রদান করলে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে। এছাড়া রফতানি খাতে শতভাগ ভ্যাট অব্যাহতি, রিটার্ন দাখিল করা থেকে অব্যাহতি, করপোরেট ট্যাক্স ১২ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা, নিরাপত্তাসামগ্রীর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার এবং রফতানি বিলের ওপর দশমিক শূন্য ২ শতাংশ স্ট্যাম্প শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ২০১৫-১৭ সালের মধ্যে গ্যাসের মূল্য দুই দফা বৃদ্ধি এবং গ্যাসের প্রেসার কম ও অনিয়মিত সরবরাহের কারণে আমাদের মিলগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি ক্যাপটিভ খাতে গ্যাসের মূল্য ৯৬ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও আমাদের পণ্যের মূল্য বাড়ানোর সুযোগ নেই। তাই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য আত্মঘাতী হবে।