হারিয়ে যাওয়ার ৭৫ বছর পর প্রেমিক যুগলের দেখা

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক,

 

লিগ্যাল ভয়েস : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মার্কিন সেনা কর্মকর্তা, কেটি রবিন্স পূর্ব ফ্রান্সের ব্রায়িতে একটি রেজিমেন্টে নিযুক্ত ছিলেন।

জার্মানির দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সে সময় জোট বেঁধে লড়াই করছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। ফ্রান্সের সেই ঘাঁটিতে থাকাকালীন তরুণ রবিন্স প্রেমে পড়েন ১৮ বছর বয়সী ফরাসি মেয়ে জেনেই পিয়ারসন নি গেনেইয়ের। তবে তাদের দেখা হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই, পূর্ব ফ্রন্টের উদ্দেশ্যে রবিন্সকে তাড়াহুড়ো করে গ্রাম ছেড়ে যেতে হয়।

রবিন্স পরে জেনেইয়ের একটি ছবি তার কাছে রেখে দেন। তারপর দীর্ঘ ৭৫ বছর পেরিয়ে যায়। তাদের দেখা হয়নি ঠিকই, কিন্তু জেনেইয়ের শেষ স্মৃতি হাতছাড়া করেননি মিস্টার রবিন্স।

এরপর একদিন ফ্রান্সের একদল সাংবাদিক বিশেষ প্রতিবেদনের কাজে রবিন্সের সাক্ষাতকার নিতে আসেন। তাদের সঙ্গে দেখা হতেই ফ্রান্সের প্রচারমাধ্যম ফ্রান্স-টুর সাংবাদিকদের জেনেইয়ের সেই ছবিটি দেখান রবিন্স। বলেন, যে তিনি ফ্রান্সে ফিরে গিয়ে জেনেইকে না হলে তার পরিবারকে খুঁজে বের করতে চান।

সাংবাদিকদের সঙ্গে এই সাক্ষাতের কয়েক সপ্তাহ পরেই রবিন্স দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ফ্রান্সে যান। তিনি ভাবতেও পারেননি সেখানে তার জন্য কত বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে।

হারিয়ে যাওয়ার ৭৫ বছর পর প্রেমিক যুগলের দেখা

তরুণ বয়সে যেমন ছিলেন কেটি রবিন্স ও জেনেই গেনেই।

এর আগে রবিন্সকে চমকে দিতে, ফ্রান্সের ওই সাংবাদিকরা আগে থেকেই সেই নারীর খোঁজ বের করেন। এরপর রবিন্সকে সাংবাদিকরা নিয়ে যান সেই রিটায়ার হোমে, যেখানে অপেক্ষায় ছিলেন গেনেই। মুখোমুখি করেন দুজনকে। দীর্ঘ ৭৫ বছর পর দেখা হতেই তারা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করেন।

গেনেই সাংবাদিকদের বলেন, তিনি সবসময়ের রবিন্সের কথা মনে করতেন। আশা করতেন যে, একদিন রবিন্স নিশ্চয়ই ফিরে আসবে। নিজেদের আলাদা হওয়ার মুহূর্তটি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে স্মৃতিচারণ করেন গেনেই।

তিনি বলেন, ‘রবিন্স যখন ট্রাকে করে ফিরে যাচ্ছিল, আমার মন এতোটাই ভেঙে পড়েছিল যে আমি ভীষণ কাঁদছিলাম। আমি আশা করেছিলাম যুদ্ধ শেষে সে হয়তো আর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবে না।’

হারিয়ে যাওয়ার ৭৫ বছর পর প্রেমিক যুগলের দেখা

সাংবাদিকদের জেনেইয়ের এই ছবিটি দেখান মিস্টার রবিন্স।

তবে বাস্তবে এই দীর্ঘ সময়ে তাদের একবারের জন্যও দেখা হয়নি। এ নিয়ে আক্ষেপের কথাও জানান গেনেই। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘রবিন্স এতদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে কেন ছিল? আমার কাছে আরো আগে কেন ফিরে আসেনি?’

জেনেই পরে বিয়ে করেন। সেই সংসারে তার পাঁচ সন্তান রয়েছে। অন্যদিকে মিস্টার রবিন্সও পরে বিয়ে করেন। যুক্তরাষ্ট্রে নিজের পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। তাদের দুজনই এখন নিজেদের সঙ্গীকে হারিয়েছেন। তারা আশা করেন যে একদিন তাদের আবারো দেখা হবে। বিদায়ী চুম্বনে এমনটাই আশা করছিলেন দুজন।-বিবিসি

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *