জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলীর যত দুর্নীতি
স্টাফ রিপোর্টার,
লিগ্যাল ভয়েস ডেস্ক : জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নরসিংদী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী বশির আহমেদের দুর্নীতি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার উপ-সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলামকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, বশির আহমেদের বিরুদ্ধে নিজ ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কোটি কোটি টাকার কার্যাদেশ প্রদান, তথ্য গোপনের মাধ্যমে নিজ জেলায় পোস্টিং নিয়ে চাকরিতে বহাল এবং আন্ডারহ্যান্ড ডিলিংয়ের মাধ্যমে কার্যাদেশ প্রদান এবং বিপরীতে অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ আমলে নিয়ে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। অনুসন্ধান পর্যায়ে শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে রেকর্ডপত্র চাওয়া হবে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা যশোর ইউনিয়নের অধীন চৈতন্যা গ্রামের হাজী ইদ্রিস আলীর পুত্র বশির আহমেদ। তিনি তথ্য গোপন করে নিজ জেলা নরসিংদীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে ৩ বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। এ পদে থেকে তিনি সহোদর (বড় ভাই) আবদুল কাদেরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আব্দুল কাদির এন্টারপ্রাইজ’কে তালিকাভুক্ত করেন কোটি কোটি টাকার কার্যাদেশ দেন। মূলত: ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে তিনি নিজেই ব্যবসা করছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সরকারি আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে বশির আহমেদ আপন বড় ভাই আব্দুল কাদিরের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স কাদির এন্টারপ্রাইজ’ নামে নিজেই ব্যবসা করছেন। প্রতিটি কাজেই তিনি আশ্রয় নিচ্ছেন দুর্নীতির। সম্প্রতি তিনি নরসিংদী সদর উপজেলার উপ-সহকারীর অফিস মেরামতের কাজে (প্যাকেজ নং-ডব্লিউ-০১) টেন্ডার ঘাপলার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের টেন্ডার প্রক্রিয়া ১০০ % ইজিপি’র মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু বশির এই দরপত্র আহ্বান করেন ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে। এ প্রক্রিয়ায় গতবছর ১১ মে একটি অখ্যাত পত্রিকায় গুপচি বিজ্ঞাপন দিয়ে টেন্ডার করেন। এর ফলে অধিকাংশ ঠিকাদারই এই দরপত্র সম্পর্কে জানতেই পারেননি। পরে পাতানো টেন্ডারের মাধ্যমে একই বছর ৬ জুন সহোদর আব্দুল কাদিরের প্রতিষ্ঠান ‘কাদির এন্টারপ্রাইজ’-এর নামে ৪১ লাখ ৭৩ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেন। কিন্তু দেখা যায় কাদির এন্টারপ্রাইজ ২৫ % কাজ না করেই (শুধুমাত্র রংয়ের কাজ করেই) সমুদয় বিল হাতিয়ে নেয়। এর আগে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন ৪০ পৌরসভা প্রকল্প থেকে। প্রকল্পটির অধীন মনোহরদী, শিবপুর ও ঘোড়াশাল পৌর এলাকায় পাইপলাইন স্থাপন কাজের কার্যাদেশ পিএন-৮ মানের পিভিসি পাইপ দ্বারা সম্পন্ন করার শর্ত ছিলো। কিন্তু অত্যন্ত নিম্নমানের পাইপ (ক্লাস-বি ক্যাটাগরি) দিয়ে ওই কাজ সম্পন্ন করা হয়। বশির আহমেদ গোপন সমঝোতায় আর্থিক সুবিধা নিয়ে পিএন-৮ পাইপের সমুদয় বিল পরিশোধ করেন। তিনি ঠিকাদারদের সংগে গোপন সমঝোতায় দরপত্র আহ্বান করেন। দরপত্রের সাথে মনগড়া কিছু শর্ত জুড়ে দেন। এমনসব শর্ত জুড়ে দেন যাতে শুধুমাত্র তার সঙ্গে গোপন সমঝোতায় আসা প্রতিষ্ঠানই ‘সর্বনিম্ন দরদাতা’ এবং ‘যোগ্য প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে বিবেচিত হয়। আন্ডারহ্যান্ড ডিলিংয়ের আওতায় কার্যাদেশ পাওয়া ওই ঠিকাদারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। অনুসন্ধান সম্পর্কে দুদক সচিব দিলওয়ার বখত বলেন, প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি সাধিত হলে সেটি অনুসন্ধানের এখতিয়ার দুদকের। অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।