রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের ব্যর্থতা তুলে ধরলো বাংলাদেশ

লিগ্যাল ভয়েস ডেস্ক : রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের পদ্ধতিগত ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি জানান, তথ্যপ্রযুক্তিগত সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার ব্যাপারে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও প্রতিষ্ঠান পূর্ব সতর্কতা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আয়োজিত প্লেনারি আলোচনায় এ কথা বলেন মাসুদ বিন মোমেন। আলোচনার বিষয় ছিল- রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের পদ্ধতিগত ‘সুরক্ষার দায়-দায়িত্ব (আরটুপি) এবং গণহত্যা প্রতিরোধ, যুদ্ধাপরাধ, জাতিগত নির্মূল ও মানবতার বিরূদ্ধে অপরাধ : মহাসচিবের প্রতিবেদন’।
এ সময় গুয়েতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গার্ট রোজেনথালের ‘মিয়ানমারে ২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত’ শীর্ষক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর যে বিভৎস সহিংসতা হয়েছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তথ্যপ্রযুক্তিগত সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও পূর্ব-সতর্কতা নিরূপণের মতো বিষয়ে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। কিন্তু মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও প্রতিষ্ঠান পূর্ব সতর্কতা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।’

শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন জানায়, রাষ্ট্রদূত মাসুদ উল্লেখ করেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যাটি ছিল ব্যাপক ও গভীর, এটি হঠাৎ করেই সৃষ্টি হয়নি। এখানে পূর্ব-সতর্কতা চিহ্ন প্রাপ্তির কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়, কিন্তু সময়োপযোগী পদক্ষেপের ঘাটতি ছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জাতিসংঘ ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে, তা রোজেনথালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।’

রাষ্ট্রদূত মাসুদ রোজেনথালের প্রতিবেদনের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘এটি অবশ্যই বলা যেতে পারে যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের যখন বিশেষ সমর্থন ও ধারাবাহিক সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল, তখন নিরাপত্তা পরিষদ ও জাতিসংঘের সমন্বিত ব্যবস্থা যথেষ্ট সমর্থন জোগাতে ব্যর্থ হয়েছে। আর তাই এ দায়ের অংশবিশেষ এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর অনেকাংশ বর্তায়।’

রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় ও সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের উদারতার কথা উল্লেখ করে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ‘ভয়াবহ নির্যাতন ও সহিংসতা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার দৃশ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দেখছে, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে এসেছেন। শেখ হাসিনা তাঁর সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে যদি ভাগ্য বিড়ম্বিত অসহায় এই জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় না দিতেন, তাহলে তাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা ছিল না।’

এ জাতীয় বর্বরোচিত ঘটনার দায়-দায়িত্ব নিরূপণ বিষয়ক আরটুপির স্তম্ভ-২ ও স্তম্ভ ৩-এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা বিষয়ে ব্যর্থ হতে পারি না। এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমারে এবং এর সমাধান মিয়ানমারেই নিহিত। মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মিয়ানমারকেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

‘সুরক্ষার দায়-দায়িত্ব (আরটুপি) এবং গণহত্যা প্রতিরোধ, যুদ্ধাপরাধ, জাতিগত নির্মূল ও মানবতার বিরূদ্ধে অপরাধ’ ৭৩তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আনুষ্ঠানিক এজেন্ডা।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মারিয়া ফার্নান্দে এস্পিনোসা গার্সেজ ও জাতিসংঘ মহাসচিবের শেফ দ্য ক্যাবিনেট (জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে) এ সভার উদ্বোধনীতে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া ৭০টিরও বেশি সদস্যরাষ্ট্র এই প্লেনারি আলোচনায় বক্তব্য দেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *