পুলিশ–র্যাবের ব্রিফিং নিয়ে নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ
ফারহানা হক,
লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর : হাইকোর্ট বলেছেন, মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তের অগ্রগতি বা গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির বিষয়ে গণমাধ্যমকে কতটুকু জানানো যাবে, সে বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন বাঞ্ছনীয়। এই নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রচারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকার জামিনের রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এই রায় দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, আসামি আয়শা সিদ্দিকা রিমান্ডে থাকাকালে বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন গণমাধ্যমে আয়শা দোষ স্বীকার করেছেন বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু অযাচিত, অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, ন্যায়নীতি ও সুষ্ঠু তদন্তের পরিপন্থী। পরিস্থিতি ও বাস্তবতা যা-ই হোক না কেন, কোনো পুলিশ সুপার দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন ধরনের বক্তব্য দিলে, তা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। সেই সঙ্গে তিনি তাঁর দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি, যা দুঃখজনক ও হতাশাজনক। উচ্চপর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ প্রত্যাশিত ও কাম্য নয়। দায়িত্ব পালনে এরপর থেকে তিনি সতর্কতা ও পেশাদার মনোভাবের পরিচয় দেবেন এটাই আদালতের অনুরোধ। মামলার কাজ এখনো চলমান। সে কারণে এ বিষয়ে এই মুহূর্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে না। তবে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেন, আজকাল দেখা যাচ্ছে যে, কোনো আলোচিত ঘটনার তদন্ত চলমান থাকলেও পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি, অভিযুক্ত বিষয় বা তদন্ত সম্পর্কে প্রেস বিফ্রিং করছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি, সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়।
অনেক কর্মকর্তাকে অতি উৎসাহ নিয়ে তদন্ত চলছে- এমন বিষয়ে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এসব বিষয় অনেক প্রশ্নের উদ্রেক করে। এ বিষয়ে আদালতের একটি রায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, এ কথা সকলকে মনে রাখতে হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বলা যাবে না যে, তিনি অপরাধী বা অপরাধ করেছেন। তদন্ত বা বিচার পর্যায়ে গণমাধ্যমে এমনভাবে বক্তব্য দেওয়া যাবে না যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধী।
মামলার তদন্ত পর্যায়ে, তদন্তের অগ্রগতি বা গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে গণমাধ্যমকে কতটুকু জানানো যাবে, সে বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করা বাঞ্ছনীয়।