দেশ থেকে প্রায় ৪ শত কোট ডলার চিকিৎসা বাবদ দেশের বাইরে যাচ্ছে
লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কতসংখ্যক রোগী বাইরে যান, বছর পাঁচেক আগে সেই হিসাব করেছিল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এ বাবদ কী পরিমাণ অর্থের বহির্গমন ঘটে, তার একটি আনুমানিক হিসাবও করেছিল সংস্থাটি। হিসাব অনুযায়ী, ২০১২ সালেই চিকিৎসা বাবদ দেশের বাইরে গিয়েছিল ২০৪ কোটি ডলার। ভারত, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে ১ লাখ ২৮ হাজার বাংলাদেশী রোগীর চিকিৎসায় এ অর্থ ব্যয় হয়েছিল।
বিদেশগামী রোগীর সংখ্যা যদিও বর্তমানে আরো অনেক বেড়েছে। চিকিৎসা ভিসায় বাংলাদেশ থেকে শুধু ভারতেই পাড়ি দিচ্ছেন বছরে ২ লাখ ৩৫ হাজার রোগী। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেও যাচ্ছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশী। এর বাইরে থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুর তো আছেই। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ বাবদ ব্যয় হচ্ছে আনুমানিক ৪০০ কোটি ডলার। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
জানা যায়, সীমান্তবর্তী লোকজন ছোটখাটো রোগের চিকিৎসায়ও ভারতমুখী হচ্ছেন। রোগ একটু জটিল হলে দেশের সব প্রান্ত থেকেই নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা ভারত যাচ্ছেন। মধ্য ও উচ্চবিত্তরা যাচ্ছেন থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ায়। তবে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন কেবল উচ্চবিত্তরাই। আর অতি ধনীরা চিকিৎসা নিতে পাড়ি দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশে। সব গন্তব্যেই বাড়ছে বাংলাদেশী চিকিৎসাগ্রহীতার সংখ্যা।
বিদেশগামী বাংলাদেশী রোগীদের সবচেয়ে বড় গন্তব্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। ২০১৭ সালে চিকিৎসা ভিসায় (এম-ভিসা) দেশটিতে যান ২ লাখ ২১ হাজার ৭৫১ জন বাংলাদেশী, যা তার আগের বছরের চেয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ বেশি। বৃদ্ধির এ হার বিবেচনায় নিলেও গত বছর শুধু এম-ভিসায় ভারত গেছেন ২ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশী। আরো বেশিসংখ্যক বাংলাদেশী রোগী আকর্ষণে ভিসা প্রাপ্তি সহজ করেছে দেশটি। এছাড়া কোনো নাগরিক ভারতে থাকাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তির জন্য প্রাথমিক ভিসা এখন থেকে আর মেডিকেল ভিসায় রূপান্তরের প্রয়োজন পড়বে না।
আগে থেকেই আক্রান্ত এমন রোগের (অঙ্গ প্রতিস্থাপন ছাড়া) ইনডোর মেডিকেল ট্রিটমেন্ট প্রাথমিক ভিসাতেই করানো যাবে। এর ফলে ভারতে বাংলাদেশীদের চিকিৎসা গ্রহণ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের (ইওয়াই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া রোগীদের ৬২ শতাংশই অসংক্রামক নানা ব্যাধির (এনসিডি) চিকিৎসার উদ্দেশ্যে মেডিকেল ট্যুরিস্ট ভিসা নিচ্ছেন।
সংক্রামক, মাতৃত্ব, নবজাতক ও পুষ্টির অভাবজনিত বিভিন্ন রোগের (সিএমএনএনডি) চিকিৎসা নিতে ভারতে যাচ্ছেন ২৯ শতাংশ রোগী। আঘাতের চিকিৎসায় ভারতে যাওয়া রোগী ৮ শতাংশ। বাকিরা অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় দেশটিতে যান।
ক্যান্সারের চিকিৎসায় দিল্লি-চেন্নাইকে অগ্রাধিকার দেন বাংলাদেশী রোগীরা। আর চোখের চিকিৎসায় বেছে নেন চেন্নাই ও কলকাতাকে। ভারতে মস্তিষ্ক ও হার্টের মতো জটিল অস্ত্রোপচারে খরচ হয় বাংলাদেশী মুদ্রায় গড়ে ২০ লাখ টাকা।
সাধারণ চিকিৎসার জন্য রোগী ও তার সহযোগীর যাতায়াত, থাকা-খাওয়াসহ সব মিলিয়ে ব্যয় হয় জনপ্রতি গড়ে প্রায় ২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ভারতে চিকিৎসা বাবদ বাংলাদেশীদের খরচ হচ্ছে বছরে ২০০ কোটি ডলারের বেশি।