পেঁয়াজের বড় চালান আসছে শীঘ্রই দাম স্থিতিশীল হবে

ভূইয়া আসাদুজ্জামান /লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :

পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দাম কম ও সহজ পরিবহনের কারনে ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্য এলাকায় বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে কিছুদিন আগে রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস(এমইপি) নির্ধারন করে দেয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মায়ানমার থেকে এলসি এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। পাশাপাশি মিশর ও তুরস্ক থেকেও এলসি’র মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা হয়। সম্প্রতি মায়ানমারও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে অনেকবার সভা করেছে, নিয়মিত ভাবে আমদানিকারকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি বৃদ্ধি এবং নৈতিকতার সাথে ব্যবসা পরিচালনার অনুরোধ করা হয়েছে। এরপরও কোন ব্যবসায়ী অবৈধ পেঁয়াজ মজুত, কৃত্রিম উপায়ে মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা, স্বাভাবিক সরবরাহে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিনই অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে দেশের বেশ কয়েকটি বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মিশর ও তুরষ্ক থেকে বেশি পরিমানে পেঁয়াজ আমদানি করছে। দু’একদিনের মধ্যে এ সকল পেঁয়াজের বড় ধরনের চালান দেশে পৌছাঁলে দ্রুত মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। তাছাড়া, নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আমদানিকারকদের উৎসাহিত করতে পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার হ্রাস করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়েছে। স্থল ও নৌ বন্দরগুলোতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সে মোতাবেক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ খালাস করা হচ্ছে। এলসি’র মাধ্যমে মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বন্দরে খালাশ করা হচ্ছে। এছাড়া মায়ানমার থেকে বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে টেকনাফ বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পেঁয়াজ এবং দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি হাটগুলোতে বিক্রিত পেঁয়াজ দ্রুত সারাদেশে নির্বিঘ্নে পৌছে যাচ্ছে।

দেশে পেঁয়াজের দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ(টিসিবি) এর মাধ্যমে ট্রাক সেলে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রয় জোরদার করা হয়েছে, ৩৫টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা মূল্যে এ পেঁয়াজ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিক্রয় চলছে। এতে করে স্বল্প আয়ের মানুষ ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ ক্রয় করার সুযোগ পাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌঁছানোর জন্য সরকার সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পেঁয়াজ দ্রুত পরিবহন নির্বিঘœ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে পেঁয়াজ আমদানি নির্বিঘœ করতে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং এর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের ১০জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৪টি টিম প্রতিদিন ঢাকা শহরের বাজারগুলো মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতর ও প্রতিটি জেলা প্রশাসন জেলার বাজারগুলোতে মনিটরিং জোরদার করেছে। ঢাকার শ্যামবাজার ও চট্রগ্রামের খাতুনগঞ্জের মতো বড় পাইকারি বাজারগুলোতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা যায়, বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে, প্রতিদিন আমদানিকৃত পেঁয়াজ আসছে, দু’একদিনের মধ্যে বড় আমদানি চালান দেশে পৌছাঁবে। ভোক্তাদের আতংকিত হবার কোন কারণ নেই, পেঁয়াজের দাম দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *