সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে স্কাউটকে কাজ করতে হবে : রাষ্ট্রপতি
আব্দুল হাই /লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসাবে স্কাউট আন্দোলনকে ব্যবহার করার জন্য স্কাউট নেতৃবৃন্দ, অভিভাবক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসাবে স্কাউট আন্দোলনকে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক উপলক্ষ্য, সভা ও সেমিনার করে যা করা না যাবে, স্কাউট আন্দোলনের মাধ্যমে সেটি করা সম্ভব।
রাষ্ট্রপতি বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় কাউন্সিলের ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তাঁর লিখিত ভাষণে একথা বলেন। বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান রাষ্ট্রপতি অনিবার্য কারণ বশতঃ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারায় তাঁর সচিব শ্যামাপদ বড়–য়া স্কাউট কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শুনান।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যে স্কাউট আন্দোলনকে দৃশ্যমান করতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে স্কাউটার, স্কাউট নেতৃবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান। তিনি দেশের স্কাউট আন্দোলনে স্কাউট সদস্য বৃদ্ধির পাশাপাশি স্কাউট কর্মকান্ডের মান বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি মনে করি, স্কাউট আন্দোলনে আপনাদের অবদান সকলে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বলেন, বর্তমান উন্নয়ন টেকসই করতে সঠিক এবং যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। ফলে, নেতৃত্ব ও স্কাউটের বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।
তিনি মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে তরুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে এবং তাদেরকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার করা থেকে দূরে রাখতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্কাউট আন্দোলন আজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। শিশু-কিশোর ও যুবদের চরিত্রবান, আত্মপ্রত্যয়ী, দেশপ্রেমিক, সেবাপরায়ন ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ আন্দোলন ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে।
আমাদের শিশু কিশোর তরুন যুবরাও স্কাউট কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়ে দেশ গঠনে অবদান রাখছে। তারা দুযোর্গকালীন দ্রুত সাড়াদান, নিরাপদ সড়ক ক্যাম্পেইন, জঙ্গিবাদ ও মাদকবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন, হজ ক্যাম্প, স্যানিটেশন, বৃক্ষরোপন ও পরিবেশ রক্ষার মতো সমাজ গঠনমূলক কাজে ভূমিকা রাখছে। এ জন্য তিনি তাদেরকে ধন্যবাদ জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে এগিয়ে চলেছে। মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। তা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অজর্নে আমাদের আরো অনেক দূর যেতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাকে আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, স্কাউট নেতা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্টদেরকে আমাদের শিশু ও তরুণদেরকে দেশপ্রেম নিয়ে নৈতিক এবং ব্যবহারিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে উৎসাহিত করতে হবে। তিনি স্কাউট আন্দোলন দেশের প্রতিটি স্কুলে ছড়িয়ে পড়ার প্রত্যাশা ব্যাক্ত করে বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস স্কাউটদের জানতে হবে এবং তারা যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করতে পারে, এ জন্য স্কাউট নেতৃবৃন্দকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বৈশ্বিক স্কাউট আন্দোলনের আলোকে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে স্কাউটরা আরো অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ স্কাউটস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্র্যলয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ স্কাউটসের চীফ ন্যাশনাল কমিশনার এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ড. এম. মোজ্জামেল হক খান বক্তব্য রাখেন।