বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদলের মৃত্যুতে দেশের রাজনীতিতে শূন্যতার সৃষ্টি হলো : প্রধানমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার/লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, তার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা এবং প্রজ্ঞায় বাদল যথেষ্ট শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য তার সেই বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর আর আমরা শুনতে পাব না।’
তিনি আরো বলেন, ‘কাজেই আমরা সত্যিই সকলেই শোকাহত।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) একাংশের সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে বেহেশত নসিব করুন।’
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাদল সবসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এবং শান্তি ও সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। জাতীয় সংসদে তিনি যথন বক্তব্য দিতেন সেই বক্তব্য প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে একটি দাগ কেটে যেত এবং অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবেই তিনি কথা বলতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এলাকার উন্নয়নের জন্য তিনি (বাদল) সব সময় সক্রিয় ছিলেন। কাজেই তাঁর মৃত্যুতে তাঁর এলাকাবাসী যারা তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে তাঁদেরও ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বহু আন্দোলন সংগ্রামে একত্রে পথ চলার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামে, রাজপথে এবং এই সংসদে তাঁর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছি, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি এমনকি সেই আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন থেকে নিয়ে ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের আন্দোলন এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ-প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর (বাদলের) সক্রিয় ভূমিকা ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি জাসদে যোগ দেন।
১৪ দলীয় জোট গঠনে বাদলের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় শেখ হাসিনা সব সময় তাঁর (বাদল) স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর রাখতেন এবং তাঁর স্ত্রী’র সংগে ও নিজের যোগাযোগ থাকার উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আজকে সকালে যখন খবরটা পেলাম (মৃত্যু সংবাদ) এটা সত্যিই একটা বিরাট ধাক্কা লেগেছিল। আমি ভাবতেই পারিনি আজকে তিনি এভাবে মৃত্যুবরণ করবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংসদে অধিবেশন শুরু হচ্ছে, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে সংসদে আসবেন, এটাই বাদলের মনে ছিল।’
বাদলের স্ত্রীও তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী) এ কথা জানান বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মরহুমের লাশ ভারত থেকে দেশে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের হাইকমিশন থেকে একজন কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠাবার ব্যবস্থা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা চলার পথে অনেক আপনজনকে হারিয়ে ফেলছি। অবশ্য সময়ের সাথে সাথে একদিন সবাইকেই চলে যেতে হবে। কারণ একদিন যেমন আমাদের জন্ম হয় তেমনি একদিন মৃত্যুর পথও বেছে নিতে হয়। এটাই হচ্ছে সত্য। যদিও এই সত্যটা মেনে নেওয়া কঠিন। কিন্তু আমাদের তা মানতেই হয়।’
শোক প্রস্তাবের ওপর জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, আবুল কালাম আজাদ, আ স ম ফিরোজ এবং মো. শাজাহান খান অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের মধ্যে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা এবং ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
মঈন উদ্দিন খান বাদল সহ নিহতদের স্মরণে জাতীয় সংসদের সকল সদস্য দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন এবং বিশেষ মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চাঁন্দগাও) আসন থেকে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইন্সটিটিউট এন্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোর সাড়ে ৫টায় ইন্তেকাল করেন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বাদল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের সময় তিনি ছিলেন প্রতিরোধ যোদ্ধা।