তুর্ণা-নিশীথার লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার এবং গার্ডের অবহেলার কারণেই কসবার রেল দুর্ঘটনা : রেলমন্ত্রী
টুটুল / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
রেলপথ মন্ত্রী মো: নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, তুর্ণা-নিশীথার লোকোমাস্টার,সহকারী লোকোমাস্টার এবং গার্ডের অবহেলার কারণেই গত ১২ নভেম্বর দিবাগত রাত ২টা ৫৫ মিনিটে কসবার মন্দবাগ রেল স্টেশন এলাকায় ‘রেল দুর্ঘটনা’ ঘটে।
দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর দাখিলকৃত পৃথক-পৃথক তদন্ত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন,৭৪১ নম্বর আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেন ‘তুর্ণা-নিশীথার’ লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার এবং ওই ট্রেনের গার্ড ট্রেন চলাচলের সিগন্যাল যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ না করে ট্রেন পরিচালনার ফলে এ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়।
রেলমন্ত্রী আজ বুধবার তার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।
তিনি জানান কসবার রেল দুর্ঘটনায় গঠিত কমিটিগুলোর প্রত্যেকটির রিপোর্টেই দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে প্রায় এক ধরনের বক্তব্য পেশ করা হয়েছে। প্রতেক তদন্ত প্রতিবেদনে সিগন্যাল অমান্য করায় সংঘটিত এ দুর্ঘটনার জন্য তুর্ণা-নিশীথার লোকোমাস্টার তাছের উদ্দিন, সহকারী লোকোমাস্টার অপু দে এবং গার্ড মোঃ আব্দুর রহমানকে দায়ী করা হয়।
রেলমন্ত্রী তদন্ত প্রতিবেদনগুলোর ভিত্তিতে সাংবাদিকদের বলেন, সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী ৭২৪ নম্বর উদয়ন এক্সপ্রেস ক্রসিংয়ের জন্য লুপ লাইনে প্রবেশের সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তুর্ণা-নিশীথা এক্সপ্রেস উদয়ন এক্সপ্রেসকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এর ফলে মর্মাস্তিক এ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, রেল পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, রেলওয়ে কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দ, বিজিবিসহ সকল সরকারী সংস্থা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং জনসাধারণের সহযোগিতায় উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা হয়।
রেলমন্ত্রী বলেন, ‘ঘটনা জানার সাথে সাথে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে যান এবং আহতদের সর্বোচ্চ সুচিকিৎসার নির্দেশনা দেন। দুর্ঘটনায় নিহত ১৫ জনের লাশ ন্যুনতম আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ঢাকার সিএমএইচে ১ (এক) জন এবং সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ (এক) জন মোট ২ (দুই) জন চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যায়।’
রেলপথ মন্ত্রী উল্লেখ করেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবার প্রত ২৫,০০০ টাকা এবং পরবর্তীতে রেলপথ মন্ত্রণালয় হতে নিহতদের পরিবার প্রতি ১ লাখ টাকা করে এবং আহতদের পরিবার প্রতি ১০,০০০ টাকা করে সাহায্য করার ঘোষণা দেয়া হয়।
সুজন বলেন, ঘটনার পর পরই ঘটনাটি তদন্তের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি, বাংলাদেশ রেলওয়ের দু’টি এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসনের আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে ৩টি কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
রেলমন্ত্রী বলেন, পৃথক ৩টি কমিটিই ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ট্রেনের লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার এবং গার্ডদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকির লক্ষ্যে লোকোমোটিভে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা,ট্রেনের অপারেশনের সাথে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণসহ মোট ৫টি সুপারিশ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, এসকল সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।’
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো: শামছুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) এবং উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।